সাধারণ দর্শককে ছুঁতে না পারলে ছবি করে লাভ নেই, মনে করেন রুদ্রনীল

RBN Web Desk: বাংলা ছবির ইদানিংকালের ট্রেন্ডকে কটাক্ষ করলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। সম্প্রতি কলকাতায় একটি ছবির ট্রেলার মুক্তি উপলক্ষে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। সেখানেই বাংলা তথা ভারতীয় ছবি নিয়ে মুখ খুললেন রুদ্রনীল। “একটা নতুন ট্রেন্ড এসেছে। কিছু সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে আসার আগেই তাকে দারুণ সিনেমা বলে ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন তিনি। “তারপর সেই সিনেমার ধনী প্রযোজকেরা সমস্ত টিকিট নিজেরাই কেটে নিয়ে জানাচ্ছেন যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রে না হলেও বহুক্ষেত্রেই এটা হচ্ছে। আমরা সকলেই জানি এই খেলাগুলো, কিন্তু জেনেও কিছু করতে পারি না।”

রুদ্রনীলের মতে, একটা ছবি দেখার জন্য যে অর্গানিক ভিড় হয়, তার জন্য একটা সাবলীল গল্পের প্রয়োজন। সেটা আজকাল কম ছবিতেই পাওয়া যায়। 

সর্বভারতীয় ছবির জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে রুদ্রনীল জানালেন, “এই যে শাহরুখ খানের সিনেমা রিলিজ় করছে, তাঁর মতো সুপারস্টারকেও নিজের ছবিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য ন্যাড়া পর্যন্ত হতে হয়েছে। কারণ তিনি সর্বসাধারণের সঙ্গে কানেক্ট করতে চান। ওদিকে আমরা যখন দক্ষিণের ছবি দেখি, বিজয় সেতুপতি কিংবা ধনুষকে নিয়ে যে পরিমাণ মাতামাতি হয়, সেই একই লেভেলের অভিনয় করলেও কাঞ্চন মল্লিক বা কোনও বাঙালি অভিনেতাকে নিয়ে সেটা হবে না। তার কারণ এখানে যে ধরণের কাজ হচ্ছে তা সকলের কথা ভেবে হচ্ছে না।” 

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের নস্টালজিয়া ফেরালেন শিলাজিৎ, নচিকেতা, অঞ্জন

একধরণের ছবির ক্ষেত্রে আগেই ধরে নেওয়া হয় সেটা ভালো হবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে উল্টোটাও হয় এবং এরকম ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করেন রুদ্রনীল। “সানি দিওল এসে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন কীভাবে ছবি হিট করতে হয়। আশি-নব্বইয়ের দশকের স্টাইলে একটা ছবি স্রেফ তার কনটেন্টের জোরে হিট করে গেল,” বললেন তিনি। যাঁরা আন্তরিক চেষ্টা করছেন একটা ভালো ছবি তৈরি করার বা গল্প বলার, তাঁদের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন রুদ্রনীল। 



তাঁর মতে, “বিভিন্ন ওয়েব চ্যানেলগুলো একটা বিশেষ ধরণের অভিনয়ের ধারা বেঁধে দিয়েছে। ফিসফিস করে কথা বলা, হিসহিস করে তাকানো, চোয়াল শক্ত করে থাকা। আসলে বৃহত্তম ভারতের সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আগে সাধারণ দর্শকের কথাটা বুঝতে হবে। যারা রাত সাড়ে দশটায় খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা পাশের বাড়ির কিছু হলে দরজা খুলে খবর নিতে যায়, এই সমাজটা ওই ফ্ল্যাট বা ক্যাফেটেরিয়ার সমাজের থেকে অনেকটাই আলাদা। ‘গদর ২’ গালে থাপ্পড় মেরে এটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।”

আরও পড়ুন: মুক্তির আগেই ‘জওয়ান’-এর পকেটে ₹২০ কোটি

তাঁর প্রশ্ন, চিরাচরিত ভারতীয় আন্তরিকতা বা বাঙালিয়ানা কোনও ছবিতে পাওয়া যাচ্ছে কি? ওই এক ধরণের অভিনয়, ও প্রেজ়েন্টেশনে আটকে থাকলে চলবে না। “সাধারণ দর্শককে ছুঁতে না পারলে ছবি করে লাভ নেই। ‘গদর ২’ দেখিয়ে দিয়েছে বিশাল কিছুর দরকার নেই। খুব সাধারণ পরিচালকও সেই ম্যাজিকটা করতে পারেন। আবার আমাদের বাংলায় একটি নতুন ছেলে—প্রসূন চট্টোপাধ্যায়—অন্যভাবে কাজ করে ‘দোস্তোজি’ বানিয়েছে। ‘দোস্তোজি’ এতদিন পর আবারও বাংলা ছবিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। এই যে আমাদের টালিগঞ্জের নিয়ম এতগুলো ক্যামেরা রাখতে হবে, এতজন লোক লাগবে এই সব হিসেব তছনছ করে দিয়েছে প্রসূনের ছবি। মানে, বাড়ির একজন যদি ফ্যাশন দেখে ট্যাটু করে, তাতে বাড়ির বাকি লোকগুলো তো পাল্টে যায় না। ট্যাটু না করা লোকের সংখ্যা ওই ফ্যাশন মেনে চলা লোকগুলোর থেকে অনেক বেশি। তাই ট্রেন্ড না মেনে বেশি সংখ্যক লোককে যে আনন্দ দিতে পারবে সেই জিতবে,” মনে করেন রুদ্রনীল।

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *