নাম্বিস্যার পুরো ঘটনা বলতেই চাননি: মাধবন
কলকাতা: প্রথম সাক্ষাতে নাম্বি নারায়ণ তাঁকে পুরো ঘটনা বলতে চাননি, এমনটাই জানালেন পরিচালক-অভিনেতা রঙ্গনাথন মাধবন। আজ শহরে তাঁর আসন্ন ছবি ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি ইফেক্ট’ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই দক্ষিণী তারকা। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাধবন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রজিত কাপুর, মিশা ঘোষাল, রবি রাঘবেন্দ্র, ও সিমরন। একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন শাহরুখ খান।
প্রায় ছ’বছর আগে মাধবনের এক বন্ধু তাঁকে জানান যে ছবি করার মতো একটা ভালো গল্প পাওয়া গেছে। ইসরোর এক বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে মালদ্বীপবাসী এক মহিলার সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ভারতীয় রকেট বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাকিস্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে সেই বৈজ্ঞানিককে ১৯৯৪ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশি অত্যাচারও সহ্য করতে হয় তাঁকে। সিবিআই তদন্তে জানা যায় তিনি নির্দোষ। পরে কোর্টের রায়েও তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। সেই বৈজ্ঞানিক হলেন নাম্বি নারায়ণ। ২০১৯ সালে মহাকাশ গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
এই পর্যন্ত শুনে মাধবন ছবি করতে আগ্রহী হয়েছিলেন। “আমার মনে হয়েছিল এটা একজন সাধারণ মানুষের জেমস বন্ড হয়ে ওঠার কাহিনী হতে পারে,” বললেন মাধবন। “সেই ভেবেই আমি নাম্বিস্যারের সঙ্গে দেখা করতে তিরুবনন্তপুরম যাই। কিন্তু তাঁকে সামনে থেকে দেখার পর আমার মনে হয়, এঁর গল্প এত সাধারণ হতে পারে না। এত তেজ, এত ক্ষোভ, এত কান্না জমে রয়েছে মানুষটার মধ্যে যার কারণ সামান্য একটা মিথ্যে অভিযোগ হতে পারে না। তিনি পুরো ঘটনা বলতে চাননি। আমি জিজ্ঞাসা করি, তিনি তো নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, তাহলে এখনও এত ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছেন কেন? তিনি বলেন, আমি নির্দোষ সেটা আমি জানি, তুমি জানো, কিন্তু গুগল ঘাঁটলে এখনও আমার নামের সঙ্গে সেই সাজানো ঘটনাকেই জড়ানো হয়।”
এরপর সাতমাস সময় নিয়ে মাধবন তাঁর চিত্রনাট্য তৈরি করেন। সেই চিত্রনাট্য যেদিন নাম্বিকে দেখাতে যান তিনি বলেন, ভালো হয়েছে, তবে একটু ভুল আছে, কারণ তখন তিনি প্রিন্সটনে ছিলেন। সেই দিন নানা কথায় নাম্বি মাধবনকে জানান যে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে নানারকম কাজ করেছেন এবং ইসরোর বিকাশ ইঞ্জিনও তাঁরই বানানো।
আরও পড়ুন: সিনেমার মতোই ছিল যে জীবন
“আমি প্রথমে বিকাশ ইঞ্জিনের গুরুত্ব বুঝিনি। পরে জানলাম, বিকাশ ইঞ্জিন ছাড়া ভারতের কোনও মহাকাশ অভিযান সফল হতে পারে না। নাম্বিস্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো আপনি আগে বলেননি কেন? কোথাও তো লেখাও নেই এই কথাগুলো। উনি ওঁর স্বাভাবিক সারল্যে বলেন, ওরা আমাকে মাইনে দিয়েছে তাই আমি কাজ করেছি, এতে বলার কী আছে! তাঁর গুরু বিক্রম সারাভাইয়ের নামের আদ্যক্ষর থেকে ইঞ্জিনটির নাম বিকাশ রাখেন নাম্বিস্যার। তখন বুঝতে পারি কেন শুরু থেকে মনে হচ্ছিল ইনি কোনও সাধারণ মানুষ নন। ওই সামান্য ঘটনাটুকু দিয়ে ওকে মাপা যায় না,” বললেন মাধবন।
এরপর মাধবন স্থির করেন, শুধুমাত্র ওই মিথ্যে অভিযোগ নয় বরং নাম্বির গোটা জীবনের ওপরেই ছবিটা বানাবেন। দেড়বছর লেগেছিল চিত্রনাট্য তৈরি করতে। তারপর এল করোনা অতিমারী। দু’বছর আটকে গেল মুক্তি। অবশেষে তামিল, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় ১ জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি ইফেক্ট’।