সোনায় সোহাগা
বাঙালির এমনিতেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। এখন আবার নানান অবাঙালি উৎসব বা পুজোকে কেন্দ্র করেও বাঙালিদের উৎসাহের অন্ত নেই। এই তালিকার অন্যতম সংযোজন ধনতেরাস উৎসব। নিন্দুকে যদিও বলে এ হলো ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটার সময়, তবে ওসব কথা শুনতে হুজুগে বাঙালির বয়েই গেছে। গত কয়েক বছর হলো তারা বেশ পরিকল্পনা করেই ধনতেরাসের দিন সোনা বা অন্য ধাতু কিনে নিজেদের সৌভাগ্যের পথ প্রশস্ত করছেন। আর আসল উদ্দেশ্য যখন সঞ্চয় তখন হলোই বা অবাঙালিদের প্রথা। পালন করতে বাধা কোথায়। কিন্তু কেন এই ধনতেরাস সেটা বোধহয় খুব বেশী মানুষ জানেন না।
যে আগুন নেভে না
পাঁচদিন ব্যাপী দীপাবলী উৎসবের প্রথমদিন হলো এই ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী বা ধনতেরাস। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের তেরোতম দিনে অনুষ্ঠিত হয় এই সঞ্চয়ের উৎসব। সমৃদ্ধি কামনায় এইদিন গৃহস্থের বাড়িতে লক্ষ্মীর আরাধনা হয়ে থাকে। সোনা বা অন্য কোনও ধাতু কেনা এই উৎসবের প্রধান অঙ্গ। বলা হয় সম্পদের উজ্জ্বলতার আকর্ষণে মা লক্ষ্মী এসে ধরা দেবেন গৃহস্থের বাড়িতে। এই দিন সোনা বা ধাতু কিনলে ভবিষ্যতে তা দ্বিগুণ হয়ে গৃহস্থের মঙ্গল করবে। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার উদ্দেশ্যে ধাতু কিনে ও প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলী উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়।
নানারকম গল্প আছে এই ধনতেরাস উৎসবকে কেন্দ্র করে। কেউ বলে ধনদেবতা কুবেরের আরাধনায় এই উৎসব পালিত হয়। আর একটি প্রচলিত গল্প অনুযায়ী একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে স্বর্গ হয়ে পড়ে লক্ষ্মীহীন। রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে দেবতাদের। মীমাংসা করার জন্য করা হয় সমুদ্রমন্থন। এভাবেই সমুদ্র থেকে লক্ষ্মী উঠে আসেন এই ধনতেরাসের দিনই। তাই হারানো লক্ষ্মী বা সমৃদ্ধিকে ফিরে পাবার আশায় ধনলক্ষ্মী পূজিত হন ঘরে ঘরে। বলা হয় লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে এই সময় ধন্বন্তরীও এসেছিলেন। তাঁর হাতে ছিল অমৃত কলস। সেই কলসের প্রতীকস্বরূপ ধনতেরাসে বাসন কেনার চল রয়েছে।
মন আজ ঈষৎ ভারাক্রান্ত
ধনতেরাস নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত যে গল্পটি পাওয়া যায় সেটি হলো ‘হিম’ নামক এক রাজার গল্প। হিম রাজার পুত্রের ভাগ্যগণনা করে পাওয়া যায় যে তার বিবাহের চতুর্থ রাতে সাপের কামড়ে মৃত্যু হবে। এ কথা শুনে তার সদ্য বিবাহিতা বধূ এক বুদ্ধি বার করে। সে তার নিজের কাছে যত সোনা রূপা ছিল সব নিয়ে প্রবেশদ্বারের কাছে স্তূপীকৃত করে রাখে। শয়নকক্ষে চারিদিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে রাখে। সারারাত গল্প করে জাগিয়ে রাখে তার স্বামীকে।
যথাসময়ে যমরাজ আসেন সাপের বেশে। কিন্তু শয়নকক্ষে ঢুকতে গিয়ে সোনা ও প্রদীপের ঔজ্জ্বল্যে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। প্রবেশপথে বাধা পেয়ে তিনি ওই পাহাড়প্রমাণ সোনাদানার ওপরে উঠে গৃহে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু রাজবধূর গল্পে মোহিত হয়ে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে নিজেই সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে যান। যেহেতু সোনার অলঙ্কার রাজপুত্রকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিল তাই এইদিন সোনা ও অন্যান্য ধাতু কিনে দুর্ভাগ্যকে গৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না। অনেকে এইদিন যমের পুজোও করে থাকেন। এছাড়া লক্ষ্মী ও গণেশের আরাধনাও চলে দেশজুড়ে।
আসল গোয়েন্দা
বাঙালির দীপাবলী উৎসব আগে শুরু হতো চোদ্দ পিদিম দিয়ে, কালিপুজোর আগের দিন। বর্তমানে কালিপুজোর দুদিন আগে সমস্ত সোনা ও বাসনের দোকানে উপচে পড়ে ভিড়। যার যতটুকু সাধ্য তার মধ্যেই কিছু না কিছু কেনেন প্রায় সকলেই। কেউ কেউ আবার ব্যাঙ্কে গিয়ে সোনা বা রুপোর কয়েনও কেনেন। যাঁদের ক্ষমতা সীমিত তাঁরাও চেষ্টা করেন অন্তত একটি স্টিলের বাসন কিনতে। অর্থাৎ যে কোনওভাবে সাধ্যমতো ধাতু কিনে ধনলক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট রাখাই সকলের উদ্দেশ্য। বেহিসেবী ও সঞ্চয়ে অনাগ্রহী বলে বাঙালির যে বদনাম আছে তা হয়তো একদিন ধনতেরাসের হাত ধরেই ঘুচবে।ধনলক্ষ্মীর কৃপায় বাঙালি আবার নতুন রূপে সম্পদের আরাধনায় মন দিচ্ছে।হয়তো এভাবেই একদিন সুদিন ফিরে আসবে বাঙালির কোষাগারে।
Bah…bhalo likhechish..bhalo laglo pore.
খুব ভাল। শেষ গল্প টা জানতাম না।
Awesome, aste aste tor lekhar o fan hoye gechi. Waiting for the next.
Darun re… Notun kichu janlam. Bhalo laglo.