আজকাল প্রথম পর্ব সম্প্রচারের আগেই সবাই স্টার হয়ে যায়: দেবলীনা

চলতি বছরে অভিনয়জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করতে চলেছেন দেবলীনা দত্ত। টেলিভিশনে ‘সাতকাহন’ ও ‘এক আকাশের নীচে’ দিয়ে মেগাধারাবাহিক জগতে চেনা মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের সময় থেকে আজও টেলিভিশনে তিনি সমানভাবে উজ্জ্বল। তবে এই মুহূর্তে যাঁরা নতুন আসছেন, তাঁরা কাজ শেখার সুযোগ একেবারেই পান না বলে মনে করেন তিনি।  

“সেই সময়টাকে যদি ধারাবাহিকের স্বর্ণযুগ বলি, তাহলে এই যুগের আগে ঠিক কী বিশেষণ বসানো যায় আমার জানা নেই,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন দেবলীনা। “তখন যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা যেভাবে কাজ শেখাতেন ভাবা যায় না। যেমন রবি ওঝা আমার মেন্টর ছিলেন। আমি যতটুকু অভিনয় জানি তা রবিজী ও আমার মায়ের থেকেই শেখা।”

আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র

এখন সিনিয়র হিসেবে যথেষ্ট সন্মান পেলেও, কাজ করে সেই ভালোলাগাটা আর উপলব্ধি করেন না দেবলীনা। “সেটা সম্ভবও নয়। তখন এই স্পিডে আমাদের কাজ করতে হতো না। কুড়িটা এপিসোড ব্যাঙ্কিং থাকতো। চিত্রনাট্য আগে থেকেই দেওয়া থাকতো। এখন তো আজ শুটিং করে পরশু টেলিকাস্ট হয়। কীভাবে কেউ কিছু শিখবে? তাছাড়া যেখানে সিরিয়ালের টিআরপি বুঝে গল্প পাল্টানো হয় সেখানে আগে থেকে কোনও পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়,” বললেন তিনি।

দুই সময়ের মধ্যে কতটা তফাৎ দেখেন তিনি? “এখনকার ছেলেমেয়েরা কিছুই পাচ্ছে না। আমরা যেভাবে গাইডেন্স পেয়েছি সেটা এরা ভাবতেও পারবে না। তবে এরা এমন কিছু পায় যা আমরা পাইনি। টেলিভিশনে মুখ দেখাবার আগেই রাস্তায় হোর্ডিং পড়ে যায়, প্রথম পর্ব সম্প্রচার হওয়ার আগেই স্টারডম হাতের মুঠোয়। এটা আমাদের সময়ে ভাবা যেত না। প্রায় সাত-আট বছর পর যখন অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের ‘কবে যে কোথায়’ করছি, তখন প্রথমবার ওই সিরিয়ালের হোর্ডিং পড়েছিল। আমাদের যেটা প্রচণ্ড খেটে অর্জন করতে হতো, সেটা ওরা কাজে ঢুকেই পেয়ে যায়,” বললেন দেবলীনা।

আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের

তবে সেই সময় কাজের ক্ষেত্রে কোনও চুক্তি না থাকার ফলে একই চ্যানেলের একাধিক ধারাবাহিকে কাজ করতে পারতেন তাঁরা। দেবলীনা নিজেই দীর্ঘ সময় ধরে একই চ্যানেলে ‘এক আকাশের নীচে’, ‘কবে যে কোথায়’ ও ‘নীল সীমানায়’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন। 

“এখন তো সব ধারবাহিকেই বিশাল বাজেট, বিরাট গ্ল্যামার, যদিও কাজের মান যে কমেছে সেটা সকলেই মানবেন,” বললেন দেবলীনা। তবে আজকাল যে পরিমাণ প্রচার করা হয় সেটা নতুনদের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বিরাট একটা সুবিধা বলে মেনে নিচ্ছেন তিনি।




“আবার এটাও ঠিক যে সাধারণ মানুষ তাঁদের অভিনীত চরিত্রের নামেই চেনে। নিজের নামে বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ তাঁদের থাকে না। ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেলে দর্শক আর মনে রাখে না। যেমন আমি আজ অনেক ঘষামাজার পর দেবলীনা দত্ত হিসেবে পরিচিত হয়েছি। একইভাবে তেমনই মনামি (ঘোষ) পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে পরের সিরিয়ালের চরিত্রটি যদি সুপারহিট না হয়, তাহলে তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবেন। আমাদের সময়টা অভিনয় শেখা বা কাজ করে তৃপ্তি পাওয়ার যে জায়গাটা ছিল, সেটা এখনকার ছেলেমেয়েদের ধরাছোঁয়ার বাইরে,” বললেন দেবলীনা। 

তবু এতদিন পরেও ধারাবাহিকের বাইরে ছবিতে তাঁকে দেখা যায় না বললেই চলে। এর কারণ কী? “এটা আমারও জানা নেই। টেলিভিশন আমাকে সবকিছু দিয়েছে। সিনিয়র অভিনেত্রী হিসেবে যে সন্মান আজ আমি পাই, তা টেলিভিশনের জন্যই। ছবিতে কেউ কেন ডাকে না সেটা সেই জগতের লোকজনই বলতে পারবেন,” বললেন দেবলীনা। 



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *