দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন প্রয়াণ শতবর্ষে ছায়ানট কলকাতার অভিনব উদ্যোগ
গত ১৭ বছর ধরে মানবতাবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির প্রচার ও প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করছে ছায়ানট (কলকাতা)। তাদের বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম একটি উদ্যোগ – ইংরেজি নববর্ষে নজরুল সম্পর্কিত তথ্য সম্বলিত ক্যালেন্ডারের প্রকাশ।
২০২৫ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের শততম প্রয়াণবর্ষে ছায়ানট (কলকাতা) প্রকাশ করেছে একটি মূল্যবান ক্যালেন্ডার ‘দেশবন্ধু ও নজরুল’। মূল ভাবনা ও তথ্য-সংগ্রহে সোমঋতা মল্লিক। সৃজনে তুফান চ্যাটার্জী। এই ক্যালেন্ডারে থাকছে নানা তথ্য, সাথে দেশবন্ধু ও নজরুলের অসাধারণ সব ছবি।
ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতায় উঠে এসেছে দেশবন্ধুর প্রতি নজরুলের অকৃত্রিম শ্রদ্ধার কথা, দুজনের একাধিকবার সাক্ষাতের ঘটনা। মাহবুবুল হকের লেখা ‘নজরুল তারিখ অভিধান’ থেকে জানা যায় – দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর (দার্জিলিং, ১৬ জুন, ১৯২৫) সংবাদ শুনে সমগ্র বাংলা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। চিত্তরঞ্জনের স্নেহধন্য ও আনুকূল্যসিক্ত নজরুলের কাছে এটা ছিল ব্যক্তিগত শোকাঘাত। কারণ দেশবন্ধু ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে নজরুল আন্তরিক প্রীতি ও প্রশংসা পেয়েছিলেন। শোকাহত নজরুল হুগলিতে ৩ আষাঢ়, ১৩৩২ বঙ্গাব্দে দেশবন্ধুর স্মৃতিতে ‘অর্ঘ্য’ শীর্ষক গান (‘হায় চির ভোলা! হিমালয় হতে’) রচনা করেন। ১৮ জুন চিত্তরঞ্জনের মরদেহ দার্জিলিং থেকে ট্রেন যোগে নৈহাটি স্টেশনে এলে নজরুল এ গানটি দেশবন্ধুর শবাধারের মালার সঙ্গে অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করেছিলেন।
দেশবন্ধুর প্রয়াণে শোকে বিহ্বল নজরুল একাধিক গান ও কবিতা লেখেন। ‘চিত্তনামা’ কাজী নজরুল ইসলামের পঞ্চম মুদ্রিত কাব্য। কাব্যটি ‘মাতা বাসন্তী দেবীর শ্রীশ্রীচরণারবিন্দে’ উৎসর্গ করেছিলেন কবি। চিত্তনামা-র প্রচ্ছদে ছিল দেশমাতৃকার ক্রন্দনরতা মূর্তি, চিত্রশিল্পী দীনেশরঞ্জন দাশ। চিত্তনামা-য় কবিতা বা গান ছিল মোট পাঁচটি – অর্ঘ্য, অকালসন্ধ্যা, সান্ত্বনা, ইন্দ্র -পতন, রাজ-ভিখারী।
ছায়নট (কলকাতা) -র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন, “বেশ কিছু বছর ধরেই আমরা ইংরেজি নববর্ষে ক্যালেন্ডার প্রকাশ করি। প্রতি বছর নজরুল সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। এই বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের শততম প্রয়াণ বর্ষ। ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতায় আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি দেশবন্ধু ও নজরুলকে, তাঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ককে। আমাদের এই প্রয়াস দেশবন্ধু ও নজরুলপ্রেমীদের কাছে মনোগ্রাহী হলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থকতা লাভ করবে।”