জায়গার নাম নিয়ে ছবি করলে দর্শকের আগ্রহ বাড়ে: অরিন্দম
আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee) ও বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (Vikram Chatterjee) অভিনীত থ্রিলার ছবি ‘দুর্গাপুর জংশন’ (Durgapur Junction)। গতবছর ‘শিবপুর’ (Shibpur) মুক্তি পাওয়ার পর থেকে অরিন্দম ভট্টাচার্যের (Arindam Bhattacharya) ছবি নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে দর্শকের মধ্যে। প্রথম ছবি থেকেই থ্রিলার গল্প নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ‘দুর্গাপুর জংশন’ ছবিতে নতুন কী থাকছে? রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এল সেই সব কথা।
ছবির নামে একটা জায়গার নাম রয়েছে। ছবিটা কি দুর্গাপুরের কোনও ঘটনাকে নিয়ে তৈরি? এরকম নাম কেন হলো?
অরিন্দম: নামটা দেওয়া এই কারণে, ‘শিবপুর’ যখন করলাম, দেখলাম মানুষ একটা জায়গার নাম থেকে সেই জায়গাটা সম্পর্কে রিলেট করতে পারছে। আমি এই ছবির শুটিং করেছি দুর্গাপুরে। তখনই মাথায় এল এরকম একটা নাম হতে পারে। জংশন নামে যে দুর্গাপুরে একটা আস্ত শপিং মল আছে তখনও জানতাম না। গল্পটা একটা সত্যি ঘটনা থেকেই নেওয়া তবে সেটা দুর্গাপুরের নয়। ছবির ঘটনাগুলো দুর্গাপুরে ঘটছে। আর নাম দেওয়ার পর দেখলাম অনেকেই গল্পটা নিয়ে আগ্রহী হলো শুধু একটা জায়গার নাম রয়েছে বলে।
পরপর দুটো ছবিতে স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করলেন। কোনও বিশেষ কারণ ছিল? বিক্রমের সঙ্গে প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
অরিন্দম: স্বস্তিকার সঙ্গে যখন ‘শিবপুর’-এর কাজ করছি, তখন এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলাম। ওর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একটা কমফর্ট জ়োন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ও ভীষণই ভালো অভিনেত্রী। আমার একজন মধ্যবয়স্ক অভিনেত্রী দরকার ছিল যাকে প্রতিবাদী সাংবাদিক চরিত্রে মানাবে। গ্ল্যামার তো আছেই। এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে যেটা এখনই বলা যাবে না। সব মিলিয়ে ঠিক যেমন চাইছিলাম স্বস্তিকার সঙ্গে সেটা মিলে যায়। ও শুনে রাজিও হয়ে গেল। আমি তো তনুশ্রীকেও (চক্রবর্তী) রিপিট করেছি এর আগে। মমদি (মমতা শংকর) তো এর আগে সব ছবিতেই ছিলেন। আর বিক্রম খুব টাফ চরিত্রে অভিনয় করেছে। ওকে এই ধরনের চরিত্রে মানায়। খুব ভালো কাজ করেছে বিক্রম। সেটা ছবি দেখলে দর্শক বুঝতে পারবে।
ছবির ট্রেলার দেখে মনে হচ্ছে মেডিক্যাল থ্রিলার। গল্পটা কি কোভিড সময়ের বা ইদানিং যেসব ওষুধ নিয়ে স্ক্যাম শোনা যাচ্ছে সেসব নিয়ে?
অরিন্দম: না, ঠিক মেডিক্যাল থ্রিলার বা স্ক্যাম নয়। এটা একেবারে বাইরের থেকে ঘটানো এক বিরাট ওষুধ কেলেঙ্কারি। মেডিক্যাল কোম্পানি সেখানে জড়িয়ে পড়ে। এখানে দেখানো হয়েছে তদন্তের কারণে কীভাবে মেডিক্যাল কোম্পানিগুলো সন্দেহের তালিকায় উঠে আসছে। কিন্তু এই ঘটনাটা কোনও মেডিক্যাল স্ক্যাম নিয়ে নয়, পুরোটাই উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটানো হয়েছিল।
ছবিতে বিক্রম আর স্বস্তিকার চরিত্রের মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে?
অরিন্দম: যে রহস্য গড়ে উঠছে সেটার তদন্ত করছে বিক্রম। তাকে কিছু ক্লু দিয়ে সাহায্য করছে স্বস্তিকা। এদের দুজনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। এই রহস্য দুজনকে মুখোমুখি এনে দিচ্ছে। এর বেশি বলা যাবে না এখন।
আপনার আগের ছবিগুলো ব্যক্তিগত কিছু ক্রাইম নিয়ে রহস্য। ‘শিবপুর’ থেকে হঠাৎ করে রেঞ্জটা বড় হয়ে গেল যেখানে অনেক মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এই স্টাইল বদলটা কেন?
অরিন্দম: বরাবর একইরকম কাজ তো করব না। অন্য কিছু চেষ্টা না করলে আর পরিচালক কীসের। হ্যাঁ এটা ঠিকই যে আমি থ্রিলার ছাড়া আর কিছু বানাই না। তার কারণ থ্রিলার আমাকে যেভাবে ভেতর থেকে উত্তেজনা এনে দেয় সেটা আর কোনও বিষয় নিয়ে কাজ করার মধ্যে পাই না। তবে একইরকম থ্রিলার নিয়ে কাজ করব এমন তো নয়। তাই অন্যরকম গল্প নিয়ে কাজ করছি এখন।
‘শিবপুর’ ছবিতে অনেক থিয়েটার অভিনেতা ছিলেন। কাস্টিংয়ের জন্য কি কোনও এজেন্সির সাহায্য নিয়ে থাকেন? এখন তো বাংলায় বেশ কিছু কাস্টিং এজেন্সি কাজ করছে
অরিন্দম: হ্যাঁ ‘শিবপুর’-এ অনেক ছোট চরিত্রের জন্য থিয়েটার থেকে অভিনেতা নিয়েছি। আর তারা সকলেই অসাধারণ কাজ করেছে। আমি নিজেও মনে করি থিয়েটারের অভিনেতারা অনেক বেশি স্বাভাবিক অভিনয় করতে পারেন। যেমন ‘বল্লভপুরের রূপকথা’তে অনির্বাণ (ভট্টাচার্য) এদের নিয়েই ছবি করেছে। ও নিজে থিয়েটারের মানুষ তাই ওর সেখানে চেনাজানা আছে। আমার সেটা নেই। তবে আমার পরিচিত অনেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত যেমন শান্তিলালদা (মুখোপাধ্যায়) আছেন, এরকম আরও কেউ-কেউ আছেন যাদের সূত্রে আমার কাস্টিংয়ের কাজটা হয়ে যায়। এখনও অবধি কোনও এজেন্সির সাহায্য নিতে হয়নি।
আরও পড়ুন: ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, সরছে বিতর্কিত দৃশ্য
পরের ছবি তো ‘শিবপুর ২’। কারা থাকছেন সেখানে?
অরিন্দম: ‘শিবপুর ২’ আশি-নব্বই দশকের গল্প। কাস্টিং এখনও কিছু ভাবিনি। মমদি থাকবেন এটুকু জানি। কিন্তু বাকিরা কে কী করবেন কিছু ভাবা নেই। কারণ খরাজদা (মুখোপাধ্যায়) বা রনিদার (রজতাভ দত্ত) কম বয়সের চরিত্র অন্য অভিনেতাকে দিয়ে করাতে হবে। সেই কাস্টিং খুব চ্যালেঞ্জিং।
‘শিবপুর ২’ তো অনেক আগে ভেবে রেখেছেন। এর বাইরে অন্য কোনও ছবির কথা ভেবেছেন যেটা আগামী দিনে করতে চাইবেন?
অরিন্দম: এরপর বাচ্চাদের জন্য একটা ফ্যান্টাসি ছবি বানাবার ইচ্ছে আছে। তবে সেটা শুধু ভাবনাচিন্তার পর্যায়েই রয়েছে এখন। এখনকার বাচ্চারা অনেক এগিয়ে রয়েছে আমাদের থেকে। ওরা কী ভাবছে বা ওরা কী চায় সেগুলো জানার বা বোঝার দরকার রয়েছে বলে আমার মনে হয়। সেইসব নিয়েই আমার ছবিটা হবে।