শার্লকের দুষ্টুমিটা ছোট থেকেই ভেতরে ছিল: ঋষভ
বাংলার প্রথম শার্লক হোমসের ছবিতে নামভূমিকায় রয়েছেন তিনি। সায়ন্তন ঘোষালের ‘সরলাক্ষ হোমস’ (Saralakkha Holmes) ছবিতে বাংলার শার্লকরূপে ঋষভ বসু (Rishav Basu) মুক্তির কয়েকদিনের মধ্যেই রয়েছেন দর্শকের নিয়মিত চর্চায়। সমালোচক ও দর্শকের বিচারে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পাসমার্ক পেয়ে গিয়েছেন তিনি। এমন একটা কঠিন চরিত্রে কীভাবে প্রস্তুত করলেন নিজেকে? অভিনয় সংক্রান্ত নানা কথা রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন ঋষভ
প্রশ্ন: শার্লক হোমসের চরিত্র নিয়ে তুমি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলে, সেটা কি ছোট থেকে চরিত্রটাকে চেন বলেই?
ঋষভ: ছোট থেকে শার্লক হোমসকে চিনেছি তো নিশ্চয়ই, তবে পড়াশোনা করতে গিয়ে হোমসকে জেনেছি অনেক বেশি। শার্লক হোমস আমার মাস্টার্সের পেপার ছিল, যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে যখন ফিল্ম স্টাডিজ় করছি তখন। সে সময় হোমস নিয়ে যাবতীয় সাহিত্য, সিনেমা সবকিছু গুলে খেয়েছি বলা যায়। ছোটবেলা থেকেই পড়া, কিন্তু চর্চা যাকে বলে সেটা ওই সময় করেছি। কখনও ভাবিইনি এই চরিত্রে অভিনয় করব। তাছাড়া শার্লকের যা বয়স বা উচ্চতা তার কোনওটাই আমার নেই। তাই ওরকম কিছু ভাবার প্রশ্নই ছিল না। নিজের মতো করে চরিত্র করেছি, যেমনভাবে আমি শার্লককে চিনি।
আরও পড়ুন: মহানগর ছেড়ে মায়ানগরীতে গিয়ে আশাবাদী ‘সম্পূর্ণা’ সন্দীপ্তা
প্রশ্ন: এক্ষেত্রে সায়ন্তন কতটা সাহায্য করেছিল? চরিত্রটা পর্দায় তৈরি করার সময় ওর ধারণা আর তোমার ধারণা কি একইরকম ছিল?
ঋষভ: সেটা দুজনে আলোচনা করেই করেছি বলা যায়। সায়ন্তনদার সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। ওর সঙ্গে কাজ করার বিরাট একটা সুবিধা হলো ও কিন্তু দৃশ্যটা আগেই নিজের মাথার মধ্যে দেখতে পায়। তাই কোন শটটা লং যাবে আর কোনটা ক্লোজ নেবে সেটা আগেই বলে দেয়। বাকিটা অভিনেতার ওপর ছেড়ে দেয়। আলোচনা নিশ্চয়ই হয়, কিন্তু বলে দেয় না যে এইভাবেই করতে হবে। তবে ওর ভিশনটা খুব পরিষ্কার, ফলে ও বুঝিয়ে দিতে পারে ও কী চাইছে।
প্রশ্ন: তোমাকে দেখলে তো বেশ শান্ত মনে হয়। অথচ সরলাক্ষ প্রচণ্ড অস্থির একটা চরিত্র। এটা নিজের ভেতর কীভাবে নিয়ে এলে?
ঋষভ: আমি দীর্ঘদিন ছোটদের স্কুলে নাটক শেখানোর কাজ করেছি। প্রায় কয়েকশো বাচ্চাকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি নিজেও ওদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বাচ্চাদের মধ্যে এই ব্যাপারটা থাকে যে আমি কী করছি সেটা অন্য কেউ অ্যাপ্রুভ করছে কিনা সেটা নিয়ে কোনও ভাবনা থাকে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে বরং এটা আমাদের ভেতর ঢুকে যায় যে এটা করলে লোকে কী বলবে। ওদের সঙ্গে থেকে আমি ওই ব্যাপারটা রপ্ত করেছি বা এটা এসে গেছে মনে হয়। তবে আমি কিন্তু মোটেও শান্ত ছেলে নই। যেটা আমাকে এখন হয়ে থাকতে হয় সেটা পুরোপুরি আমি নই। আমার স্কুলের ইতিহাসে খুঁজলে বোধহয় জানা যাবে আমার মতো দুষ্টু ছেলে স্কুলে আর আসেনি। ভয়ঙ্কর দুষ্টু ছিলাম আমি। সেই ব্যাপারটা তাই চরিত্রে নিয়ে আসতে আমার অসুবিধা হয়নি।
আরও পড়ুন: “সব ছবির মধ্যে দিয়েই প্রচলিত বাউন্ডারিগুলো পেরোতে চাই”
প্রশ্ন: বাংলায় গোয়েন্দা হিসেবে আমরা কয়েকটা মুখকে চিনি, যারা ঘুরেফিরে বিভিন্ন রহস্যে আসেন। সেখানে তুমি একেবারেই ফ্রেশার বলা যায়। তার ওপর মলাট চরিত্রে রয়েছ। কতটা দায়িত্ব আর চাপ ছিল?
ঋষভ: বিশাল একটা দায়িত্ব তো অবশ্যই, তবে চাপ সেই অর্থে ছিল না। কারণ আমাকে কোনও দিক দিয়েই হোমসের মতো দেখতে নয়, সেই উচ্চতাও নেই। তাই অন্য কোনও মাল্টিভার্সে আমি শার্লক, এই ভেবেই কাজটা করেছি বলা যায়। তাছাড়া আগেও আমি নাম ভূমিকায় কাজ করেছি। ‘ভটভটি’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন’ এই নিয়ে অনেকগুলো ছবি করলাম নামভূমিকায়। তাই আলাদা চাপ এখন আর থাকে না। এগুলো অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: তোমাদের অ্যাকশনগুলো পর্দায় দেখতে একেবারে বাস্তবের মতো লেগেছে। লন্ডনে গিয়ে যখন ওখানকার অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করছ, অ্যাকশন দৃশ্যগুলো করছ, ওদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? চরিত্রটা তো ওদের দেশের একজনেরই
ঋষভ: ওরা সেটা জেনেই কাজ করেছে, আর খুব আনন্দের সঙ্গে কাজ করেছে। আমাকে নিয়ে ওরা খুব উচ্ছ্বসিত ছিল। অ্যাকশন করতে গিয়ে আমি খানিকটা আহতও হয়েছিলাম। বোতল ভাঙার দৃশ্যে আমার হাতে ভালোই লেগেছিল, আবার আমিও একজনকে মেরে তার পা ফুলিয়ে দিয়েছি। এমনিতেও আমি অ্যাকশন করার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না সবসময়, যেটা ঠিক নয়। তবে ওদের সঙ্গে কাজ করে দারুণ মজা পেয়েছি। বিভিন্ন হলিউড বলিউড ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো করে ওরা, তাই ভীষণ দক্ষ সকলেই। আমাদের অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার কেভিন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওদের পরবর্তী ওয়ার্কশপের সময় ওখানে যাওয়ার জন্য।

 
									
					 
					 
					