গানে গানে পঞ্চাশে অনুপ জলোটা, সাক্ষী রইল শহর

RBN News Desk: সঙ্গীত জীবনের পঞ্চাশ বছরে পা দিলেন ভজন সম্রাট অনুপ জলোটা (Anup Jalota)। সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো অন্যরকম এক সঙ্গীত সন্ধ্যা, যার নাম ‘গজ়ল সফরনামা’!  ব্যবস্থাপনায় ছিল ‘নব ছন্দম’। নানা কারণে অনুষ্ঠানটি অন্যরকম ছিল নিঃসন্দেহে। প্রথমত এই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে হাজির ছিলেন পদ্মশ্রী অনুপ জলোটা, বিদূষী প্রভাতী মুখোপাধ্যায় ও প্রবীণশিল্পী চন্দন দাস। দ্বিতীয়ত এই বছরই গানে গানে পঞ্চাশে পা রেখেছেন অনুপ জলোটা। তৃতীয়ত এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গজ়লের দীর্ঘদিনের পথ চলার একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে নবীনরাও।  সেই রেডিওর যুগ থেকে শুরু করে হালফিলের ইনস্টাগ্রাম যুগ পর্যন্ত গজ়লের দীর্ঘ পথ ছিল এই সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ।

অনুষ্ঠান শুরু হয় নবীনদের গানে। শ্রীমতি তনয়া ভাদুড়ি, জয় ভট্টাচার্য, অর্ণব বিশ্বাস, অ্যানি বিশ্বাস, শুভ্রা পালের গান দিয়ে সূচনা হয় ‘গজল সফরনামা’-র। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন রেডিও সঞ্চালক আরতি।

আরও পড়ুন: ক্লাইম্যাক্স দিয়ে শুরু যুদ্ধের, ফিরছেন ভাইজান

গজ়ল কিংবদন্তি বেগম আখতারের গানের ডালি নিয়ে মঞ্চে হাজির হন বিদূষী প্রভাতী মুখোপাধ্যায়। ‘জোছনা করেছে আড়ি’, ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’, ‘ফিরায়ে দিও না মোরে’, একাধিক গানে জমে ওঠে গজ়ল মেহফিল। কথায় কথায় তিনি জানালেন, অনুষ্ঠানের দিন সকাল সকালই তাঁর বাড়িতে হাজির ছিলেন অনুপজি। যুগলবন্দী মঞ্চে না হলেও, বাড়িতে দুই শিল্পী বেশ কিছুটা সময় গান নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছেন। গজ়ল নিয়ে অনুষ্ঠান খুব একটা হয় না। তাই ‘গজ়ল সফরনামা’ তাঁদের কাছে নিঃসন্দেহে একটা বাড়তি আবেগ। এই প্রজন্ম যাতে গজ়লের গুরুত্ব বোঝে সেজন্য এরকম অনুষ্ঠান অত্যন্ত জরুরী। তাঁর মতে, “শিশুদের জোর করে কোনও কিছু করানো উচিত নয়। গান ভালবাসার বিষয়। এটা জোর করে হয় না। পাশাপাশি বাবা মায়েদেরও বুঝদার হতে হয়। ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যে এগোলে মুশকিল।”

এরপরে অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শককে গানে মুগ্ধ করেন শিল্পী চন্দন দাস। দীর্ঘদিনের সঙ্গীত জীবন তাঁর। লাইমলাইট থেকে কিছুটা দূরে থেকেও নিজের ঘরানার কাছে বিনয়ী থেকেছেন। মঞ্চে তাই উজাড় করে দিয়েছেন নিজের সবটুকু। তাঁর মতে এরকম সন্ধ্যাগুলো বড্ড বেশি ভালোবাসার।

আরও পড়ুন: থ্রিলার সরিয়ে এবার ইতিহাস আর দেশপ্রেমের ঢল বাংলা ছবিতে

সব শেষে মঞ্চ আলোকিত করেন অনুপ‌জি। ১৯৭৫ সালে রেকর্ড হওয়া জনপ্রিয় গান ‘অ্যয়সি লাগি লগন’ দিয়ে শুরু করেন অনুষ্ঠান। করতালি আর কেয়াবাত ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে অডিটোরিয়াম। একে একে জগজিৎ সিং, কিশোর কুমারকে স্মরণ করেন গানে-গল্পে। অনুষ্ঠান শেষ করেন নিজের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে’ দিয়ে। তবে অনুষ্ঠান শুরুর আগে গ্রিনরুমে রেডিওবাংলানেট এর সঙ্গে কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন। জানালেন বহুবার কলকাতায় এসেছেন তিনি। এখানকার গোলাপ জামুন, জলভরা, মিষ্টি দই তাঁর খুব প্রিয়। তিনি ভজন সম্রাট, তবে গজ়লেও সমানভাবে জনপ্রিয়। এই দুই ধারার গান তিনি সামলান কীভাবে? উত্তরে জানালেন, “এক ধরনের গানে ঈশ্বর প্রেম আরেক ধরনের গানে প্রিয় মানুষের প্রতি প্রেম ব্যক্ত হয়। দুটি ক্ষেত্রেই প্রেম আছে। নিজের আর্টে সেই প্রেম যখন মেশে তখন চমৎকার হয়”।

এখন রিলস, ভিউজের যুগ। প্রিয় সেলিব্রিটিরা এখন অনুরাগীদের মুঠোফোনে বন্দী সব সময়। কতটা বদলেছে সময়? প্রশ্ন শুনে একটু থেমে মৃদু হাসলেন শিল্পী। বললেন, “এখন তো শিল্পীদের অনেক অনেক ফলোয়ার্স। সবাই কি তারা ফ্যান? আমাদের একটা ফ্যানবেস ছিল, আছে, থাকবে।”

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *