দেশপ্রিয় পার্কের একটা বাড়ির ছাদ থেকে দেখেছিলাম উত্তমজ্যেঠুর শেষযাত্রা: শাশ্বত
RBN Web: দিনটা ছিল ২৫ জুলাই, ১৯৮০। দেশপ্রিয় পার্কের একটা বাড়ির ছাদ থেকে উত্তমকুমারের শেষযাত্রা দেখেছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। চার দশক পেরিয়ে সেই উত্তমকুমারের চরিত্রেই অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। পরিচালক অতনু বসুর ছবি ‘অচেনা উত্তম’-এর নামভূমিকায় থাকছেন শাশ্বত। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শ্রাবন্তী চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায়, সম্পূর্ণা লাহিড়ী, বিশ্বনাথ বসু ও তীর্থরাজ বসু।
তবে উত্তমকুমারের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ কোনওদিন আসবে, এ কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি বলে জানালেন শাশ্বত। এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
“প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল এটাই যে এটা ভীষণ কঠিন একটা চরিত্র,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন শাশ্বত। “মহানায়কের যে ক্যারিশমা সেটা ছুঁতে পারা শুধু আমার কেন, কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। আমি অতনুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওঁর কোনদিকটা ধরতে চাইছ? কারণ ছবির নাম অনুযায়ী উত্তমকুমার সম্পর্কে অনেক না জানা তথ্য উঠে আসবে। রুপোলি পর্দার চেনা মহানায়ককে হয়ত এখানে দেখা যাবে না। যেমন ছবি শুরুই হচ্ছে ওঁর শেষ শুটের দিন থেকে। সেই দিনটা সকালে ঘুম ভাঙা দিয়ে ছবির গল্প শুরু হবে।”
আরও পড়ুন: সব কান্নার শব্দ হয় না, বেজে উঠল পটদীপ
প্রসঙ্গত ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির জন্য শেষবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তম। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মারা যান তিনি।
কোনও বাস্তব মানুষের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কখনওই হুবহু সেই মানুষটা হয়ে ওঠা যায় না বলে মনে করেন শাশ্বত। সত্যজিৎ রায় বা স্বামী বিবেকানন্দ যেই হোন না কেন, কখনওই অভিনয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সেই মানুষটিকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। সেইরকম উত্তমকুমার হয়ে ওঠাও সম্ভব নয়। ছবির মাধ্যমে ওঁকে যতটা চেনা যায়, সেভাবেই তাঁকে পর্দায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন বলে জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান
“উত্তমকুমারকে নিয়ে আমার শৈশবের তেমন কোনও স্মৃতি নেই,” জানালেন শাশ্বত। “আমি ওঁকে দেখেছি শেষের দিকে। সে সময় বাংলা ছবি বা তার শুটিং নিয়ে বোঝার মতো বয়সও আমার হয়নি। মৃত্যুর পরের দিনটা—যখন ওঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—সেদিন যা মানুষের জমায়েত দেখেছিলাম তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। দেশপ্রিয় পার্কের একটা বাড়ির ছাদে ছিলাম সেদিন। এত মানুষ ছিলেন যে ডানদিকে দেশপ্রিয় পার্ক আর বাঁদিকে সাদার্ন অ্যাভিনিউর কোথাও একফালি রাস্তা দেখা যাচ্ছিল না। আমার তখন মনে হয়েছিল উত্তমজ্যেঠু তো বাবার সঙ্গে শুটিং করেন, তাহলে তাঁর জন্য এমন একটা ব্যাপার কেন ঘটছে? আমার কাছে তো তখন উনি জ্যেঠু, উত্তমকুমার আসলে কী, তা জেনেছি অনেক পরে। তাই যেহেতু সেভাবে ওঁর স্মৃতি আমার নেই তাই বিভিন্ন ছবিতে ওঁর ইমেজটাই আমাকে সাহায্য করছে।”
উত্তমকুমার বলতে যে ছবিটা চোখে ভেসে ওঠে সেটা অনুসরণ করেই ‘অচেনা উত্তম’-এ অভিনয় করবেন বলে জানালেন তিনি।
উত্তমকুমারকে নিয়ে বাঙালির আবেগ শাশ্বতর মধ্যেও পুরোমাত্রায় রয়েছে, তাই সমালোচনা যে আসবেই তা তিনি জানেন। “আমি জানি মানুষ সমালোচনা করবেনই। সেটাই স্বাভাবিক। তবে সেটায় কান দেওয়া তো আমার কাজ নয়। আমার কাজ অভিনয় করা। সেটা আমি করব। এটুকু বলতে পারি যে আমি কোথাও ওঁকে নকল করার কোনও চেষ্টা করব না। কারণ সেটা করা অসম্ভব। অভিনয় দিয়ে যতটা ওঁর ম্যানারিজ়মের কাছাকাছি যাওয়া যায় সেই চেষ্টাটুকু আমি করব” জানালেন তিনি।
নিজের সেরা অভিনয়ের তালিকায় এই ছবিকে কি রাখবেন শাশ্বত? “অবশ্যই। আমার নিজের পছন্দের কাজের মধ্যে যেমন ‘মেঘে ঢাকা তারা’ থাকবে, তেমনই এটাও থাকবে। কারণ কোনও বাস্তব চরিত্রে অভিনয় করা সবসময়েই খুব কঠিন। আমি ঋত্বিক ঘটককে সামনে থেকে দেখিনি। ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্প’ ছবিতে ওঁর অভিনয় দেখে ওই চরিত্রটা আমি করেছিলাম। সেরকমই এটাও উত্তমকুমারের নানা ছবি দেখেই করতে চলেছি। এছাড়া আর কিছু এই মুহূর্তে ভাবছি না। এর বেশি ভাবলে কাজটা করতে পারব না,” হেসে উত্তর দিলেন শাশ্বত।