“তোপসের চরিত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা নিয়ে মাথাব্যথা নেই”

গত কয়েক বছর ধরে সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট তপেশ চরিত্রে তাঁর নাম উঠে এসেছে বহুবার। অবশেষে সেই চরিত্রে তাঁকে দেখা যাবে অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘সাবাশ ফেলুদা’ ওয়েব সিরিজ়ের ‘গ্যাংটকে গন্ডগোল’-এ । ৫ মে সিরিজ়টি মুক্তি পাওয়ার কথা। শিশুশিল্পী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করে কৈশোর পেরিয়ে বাংলা ছবির জগতে বর্তমানে যথেষ্ট জনপ্রিয় নাম ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। ফেলুরূপী পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের খুড়তুতো ভাই তপেশ হিসেব আসছেন ঋতব্রত। কেমন ছিল এই বহু প্রতীক্ষিত চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা? বললেন ঋতব্রত, শুনল রেডিওবাংলানেট

থিয়েটার, সিরিজ় মিলিয়ে কাজ করে চলেছ পরপর। অথচ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি তোমাকে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না

আসলে আমি বিশেষ কোথাও যাই না। কাজকর্ম করছি না তা নয়, তবে সেগুলো আসছে কিছুটা গ্যাপ নিয়ে। এছাড়া আমার পড়াশোনার চাপ রয়েছে, থিয়েটারের জন্যেও সময় দিতে হয়। ২০২০ সালের পর খুব বেশি ছবি মুক্তি পায়নি। সুব্রতদার (সেন) ছবি ‘প্রজাপতি’, অরুণাভদার (খাসনবিশ) ‘নীতিশাস্ত্র’ এসেছিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এছাড়া ইন্দ্রদীপদার (দাশগুপ্ত) ‘উত্তরণ’ও ছিল। এই ছবিগুলোয় কাজ করে ভালো লেগেছে। আমার তো ফেস্টিভ্যালেও যাওয়া হয়নি কারণ ওটা থিয়েটারের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। শীতকালে আমাদের পরপর কল শো থাকে। 



তোপসের চরিত্রে অবশেষে তোমাকে দেখা যাবে। এরকম একটা কিংবদন্তি চরিত্র, কতটা প্রস্তুতি ছিল তোমার দিক থেকে? আগ্রহ না টেনশন কোনটা বেশি ছিল?

আমি একটু বড় হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে অনেকে আমাকে তোপসে বলেই ডাকত। অনেকেই এর আগে বলেছে তোপসে হিসেবে আমাকে নাকি মানাবে। তবে সেভাবে প্রস্তাব আসেনি। অবশেষে যখন এল সেখানে ২০১৭ সালের সময়কাল ধরে গল্পটা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেলুদার প্রতিটা ছবি বা সিরিজ় নিয়েই চুলচেরা বিচার চলে আজকাল। তবে আমার বরাবরই মনে হতো পরমদাকে ফেলুদা হিসেবে ভালো মানাবে।

এর আগে যারা তোপসে করেছে তাদের সেটাই প্রথম কাজ বা বলা ভালো সেই চরিত্রে অভিনয় করেই তাদের পরিচিতি এসেছে। একমাত্র তুমি আগে নিজের কাজ দিয়েই নিজেকে চিনিয়েছ, তারপর তোপসে হিসেবে নির্বাচিত হয়েছ। এটা চরিত্রটার ক্ষেত্রে কতটা সুবিধা বা অসুবিধার সৃষ্টি করেছে বলে মনে হয়? 

আমার ক্ষেত্রে এটা সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। আমার মনে হয়েছিল চরিত্র দিয়ে নিজেকে চেনাবার থেকে আগে নিজের নামে পরিচিত হয়ে তারপর ঋতব্রত তোপসে করছে, এই ব্যাপারটার দর্শকদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। তবে তোপসে নিয়ে আমার কোনও চাপ ছিল না। এমন যদি হয় যে আমার আগে ১৩৩জন অভিনেতা রামকৃষ্ণ পরমহংসর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তারপরেও যদি আমাকে করতে বলা হয়, তাও আমি করব। যে কোনও সাহিত্য যখন কেউ প্রথম পড়ে, সেটাই তখন তাঁর কাছে প্রথম বা নতুন। সেটা আগে অনেকের পড়া থাকলেও তাঁর নিজের কেমন লাগছে, সেটাই এখানে প্রধান বিষয়। তেমনই পৃথিবীতে অনেক নতুন দর্শক আছেন যাঁরা শুধুমাত্র পুরনো কাজগুলো দেখে নতুন সবকিছুকে উড়িয়ে দেন না। আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেলুদাকে নিয়ে যাঁরা সারাক্ষণ আলোচনা করেন, তাঁরা ছাড়াও বহু দর্শক ফেলুদা দেখেন বা দেখবেন। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেন, আমি তাঁদের কখনও সামনাসামনি দেখিনি। বরং এমন অনেককে আমি চিনি যাঁরা ফেলুদাকে একেবারে নতুনভাবে চিনবেন বা চিনছেন। তাঁদের অনেকেই হয়তো বই পড়ে না। সিনেমা, সিরিজ় দেখেই তারা সেই চরিত্রটাকে চিনছেন। যাঁদের ওই প্রোফাইল পিকচার ছাড়া কোথাও দেখা যায় না, তাঁদের সমালোচনার কারণে নতুন কাজ হবে না এমন তো নয়। এই চিত্রনাট্যটা যেহেতু একটা নতুন সময়ে, তাই আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। এখানে ফেলুদার হাতে একটা আইফোন আছে, তোপসের হাতে স্যামসাং ফোন আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে ফেলুদা ক্রাইম সলভ করছে না। আর গোটা সিরিজ়ের মূল চরিত্র বলতে পরমদা, ঋত্বিকদা (চক্রবর্তী), রুদ্রনীলদা (ঘোষ) আর আমি। কোনও দৃশ্য এলে আমরাই নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করে নিতাম কীভাবে করব। দশ পর্বের সিরিজ়। একটা দৃশ্যের সঙ্গে আরেকটা দৃশ্যে কানেক্টেড থাকতে পারে, অরিন্দমদা শুধু এটুকু বলে দিত। বাকিটা আমাদের ওপরেই ছেড়ে দিত। আমরা নিজেদের মতো আলোচনা করে নিতাম। 

আরও পড়ুন: এবার বড়পর্দায় নন্টে-ফন্টে, সুপারিনটেনডেন্ট স্যার

ফেলুদা নিয়ে নতুন সিরিজ়, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম কথা উঠবেই। সমালোচনার জন্য প্রস্তুত?

সমালোচনা আসতেই পারে। যে কোনও কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। বিবিসির শার্লক হোমস সারা পৃথিবী দেখেছে। কারও পছন্দ হয়েছে, কারও হয়নি। আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা থাকি না, তাই সেই নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সমালোচনা হবেই সেটা তো জানা কথা। তবে কাজটা খুব ভালো হয়েছে সেটা আমি বলতে পারি। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজ করেছি আমরা। আর নিজে আছি বলেই জানি কাজটা খুব মন দিয়ে করেছি। পঁয়ত্রিশ দিন ধরে শুট হয়েছে। চিত্রনাট্যটা এখনকার সময়ের মতো করে লেখা হয়েছে। ২০১৭ সালে গ্যাংটক শহরে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে যা-যা হতে পারে, তাই থাকবে। যেমন, এরকম একটা ঘটনায় সিকিম পুলিশ তদন্ত করবেই। সেই পুলিশ অফিসারের চরিত্রটা করেছে সৌরসেনী (মৈত্র)। এরকম সামান্য কিছু বদল করা হয়েছে গল্পে, আর সেটা বর্তমান সময়ের কথা ভেবেই। এছাড়া গল্পের মূল ঘটনাগুলো সব একই থাকছে। 

‘গ্যাংটকে গন্ডগোল’-এর পর তোপসে হিসেবে পরের গল্পতেও তো থাকবে নিশ্চয়ই, সেটা কোনটা হতে চলেছে?

পরেরটা কী হবে জানি না। সেটা পুরোটাই পরিচালক আর চ্যানেল জানে। হলে তো ভালোই হয়। নিশ্চয়ই চাইব আরও হোক।

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
2

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *