ক্যামেরার কারসাজি, ঘোড়দৌড়ের দৃশ্য ছাদে মেলালেন রিঙ্গো
RBN Web Desk: ছাদে শুট করে ‘দ্য সেনাপতিজ়’-এর জন্য পুরোনো কলকাতার নানা দৃশ্য তুলেছিলেন বলে জানালেন পরিচালক অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন আগে ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘দ্য গ্রিন উইন্ডো’র শুটিংয়ে রিঙ্গোকে পাওয়া গেল অন্য এক ভূমিকায়। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন জয়া শীল ঘোষ। আর এই ছবির চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন রিঙ্গো।
পরিচালনা ছেড়ে হঠাৎ ক্যামেরা ধরলেন কেন? উত্তরে রিঙ্গো রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “জয়া খুব পুরোনো বন্ধু। বহুদিন পর ও ছবি করছে। আর ইন্দিরার এটা প্রথম ছবি। ওকেও অনেকদিন ধরে চিনি। ও ক্যামেরাটা করার জন্য আবদার করেছিল, আর আমারও হাতে কয়েকদিন সময় ছিল। সেই ফাঁকেই এই কাজটা করলাম। ভালোই লাগছে। আমি যে ধরণের কাজ করি তার থেকে একটু আলাদা হলেও আমার ইউনিটই রয়েছে এখানে। তাই কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: কলকাতার বুকে ক্যাফে থিয়েটারের অভিনব প্রয়াস
এই মুহূর্তে নতুন ছবির কাজ শুরু করে দিয়েছেন রিঙ্গো। কিছুদিন আগে তাঁর ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য সেনাপতিজ়’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন মুক্তি পেয়েছে। এই সিজ়নে পুরোনো কলকাতার রেসকোর্সের একটি দৃশ্য রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে এত বড় ফ্রেমে ওই দৃশ্যের শুটিং কীভাবে সম্ভব হলো?
“লকডাউনের আগে রেসকোর্সে কাজ করার অনুমতি নিয়েছিলাম,” জানালেন রিঙ্গা। “আগে মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মীতে বিজ্ঞাপনের ছবি করতে গিয়ে কিছুটা দৃশ্য তুলে রেখেছিলাম। কলকাতা রেসকোর্সেও কিছু তোলা ছিল। ওরা আমাকে বলেছিল একটা ঘোড়দৌড়ের দৃশ্য শ্যুট করতে দেবে। ওই দৃশ্যের শুটিং কলকাতাতেই হওয়ার কথা ছিল। আট-ন’শো লোক নিয়ে কাজটা করব ভেবেছিলাম। তবে লকডাউন পড়ে যেতে সব গোলমাল হয়ে গেল। প্রযোজনা সংস্থা বলল, এটা বাদ দেওয়া যাবে কিনা। কিন্তু গল্পে দেবেনের (সেনাপতি) জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ওই ঘোড়দৌড়। ওটাকে বাদ দেওয়া অসম্ভব।”
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
সিরিজ়ের গল্প আশির দশকের। সেই সময় কলকাতায় সবথেকে উঁচু বাড়ি ছিল টাটা সেন্টার ও চ্যাটার্জী ইন্টারন্যাশনাল। রেসকোর্সের প্রেস বক্সে বসলে ওই দুটি বাড়ি দেখা যেত বলে জানালেন রিঙ্গো। এখন যদিও আশেপাশে আরও অনেক নির্মাণ হয়েছে। “একদিন সাংবাদিক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলাম,” জানালেন রিঙ্গা। “ওঁর বাড়ির ছাদ থেকে জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলটা দেখা যায়। দেখে চমকে গেলাম যে ম্যারিয়টকে একটা বিশেষ অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে টাটা সেন্টারের মতো লাগে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অত লোকজন নিয়েই পুরো শুটিং ছাদের ওপর হলো। সঙ্গে জুড়ে দিলাম আমার আগে তোলা রেসকোর্সের ফুটেজ। তবে সিরিজ়ে দেখলে সেটা কেউ ধরতে পারবে না।”
তবে স্বাভাবিক কারণেই ঘোড়দৌড়ের দৃশ্যে কম্পিউটার গ্রাফিক্স দ্বারা ক্রাউড মাল্টিপ্লাই করে দেখাতে হয়েছে। “সেটাও না বলে দিলে বোঝা যাবে না,” দাবি রিঙ্গোর। “আমার জীবনের এখনও পর্যন্ত ওটাই সবথেকে কঠিন শট। বিশাল পরীক্ষা ছিল ওই দৃশ্যটা।”
এছাড়াও সিরিজ়ে কলকাতা বন্দরের কিছু দৃশ্য রয়েছে। সেটাও ওই একই ছাদ থেকে তোলা। “মিলনমেলা তৈরির কাজ চলছে অনেকদিন ধরে। ছাদ থেকে ওই বড়-বড় স্ট্রাকচারগুলো একটা বিশেষ দিক থেকে দেখলে ডকের ক্রেনগুলোর মতো মনে হয়। ওই একটা ছাদকে আমরা পাঁচটা লোকেশন বানিয়েছি,” জানালেন রিঙ্গো।
এভাবে শুট করার চিন্তাভাবনা তাঁর আগে ছিল না। করোনা অতিমারী ও লকডাউনের কারণেই তাঁকে বিকল্প উপায় খুঁজে বার করতে হয়েছে বলে জানালেন রিঙ্গো। “পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল আমাকে কাজটা শেষ করতেই হবে। তখন এইসব আইডিয়া মাথায় এল আর কাজটাও সুন্দরভাবে উৎরে গেল,” হাসতে-হাসতে বললেন রিঙ্গো।
ছবি: রাজীব মুখোপাধ্যায়