মোদ্দা কথা হচ্ছে যেটা বিয়েবাড়ি জমজমাট
ছবি: প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা
পরিচালনা: সম্রাট শর্মা
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট
অভিনয়ে: ঋষভ বসু, ঈপ্সিতা মুখোপাধ্যায়, মানসী সিংহ, অভিজিৎ গুহ, রেশমী সেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
RBN রেটিং: ৩/৫
পর্দার নায়ক বা নায়িকার প্রতি অবসেশন বহু দর্শকের আছে। ছোটবেলায় অনেকেই পছন্দের নায়ক বা নায়িকার ছবি ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছে বা খবরের কাগজ থেকে ছবি কেটে ডায়েরিতে সেঁটেছে। চিত্রতারকাদের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমোতে গেছে অনেকে। এমনকি পছন্দের নায়ককে বিয়ে করতে চাওয়ার স্বপ্নে বিভোর পাগলের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যেমন এই ছবির ঋতুপর্ণা (ঈপ্সিতা)। পাকেচক্রে তার বিয়ে হয়ে প্রসেনজিতের (ঋষভ) সঙ্গে। এদের নাম যেমন মজাদার তেমনই আবার ওজনদারও বটে। মজার নামে মজাদার ঘরোয়া ছবি বানিয়েছেন সম্রাট। অবসেশন কীভাবে মানুষকে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে সেই গল্পই বলেছেন তিনি।
ছোটবেলায় সেনগুপ্ত পরিবারে জন্মানোর পর ঠাকুমার ইচ্ছেতে নাম রাখা হয় ঋতুপর্ণা। দিন বদলায়, ঋতু যত বড় হয় তত বেশি করে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ভক্ত হয়ে ওঠে। অনেকটা ‘ফ্যান’ ছবির গৌরব চান্নার মত। বাইশবার বিয়ের সম্বন্ধ এলেও ঋতুপর্ণা নাকচ করে দেয়। অবশেষে ঠাকুমার জোরাজুরিতে সে রাজি হয়। শর্ত একটাই। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামক কোনও ছেলেকেই সে বিয়ে করবে। এমনকি তার ডাকনামও বুম্বা হতে হবে। অর্থাৎ সে শুধুমাত্র নামটিকে বিয়ে করবে। সে তার জীবনের সঙ্গে ‘ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, কেয়ার অফ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়’ বাক্যটি জুড়তে চায়।
আরও পড়ুন: দুষ্টের দমনে ‘অনন্য শারদীয়া’, মুক্তি পেল ট্রেলার
ভাগ্যের ফেরে এই নামের একটি ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়। এই প্রসেনজিৎ শান্ত, ধীর, স্থির, ব্যাঙ্কে কর্মরত। ছোট থেকেই তার নামের জন্য তাকে প্রচুর দাম দিতে হয়েছে। এত ভারী নামের বোঝা বইতে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে প্রচুর অপমানও, গোদা বাংলায় যাকে বলে হ্যাটা। এহেন পরিস্থিতিতে এই সাধারণ প্রসেনজিৎ অভিনেতা প্রসেনজিতের চরমতম হেটার। কিছুটা ছোটবেলায় হওয়া অপমানের বদলা নিতেই প্রসেনজিৎ (ঋষভ) ঋতুপর্ণাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। ঋতুর মন জয় করতে সে স্ত্রীকে কথা দেয় অভিনেতা প্রসেনজিতের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করাবে। এইভাবেই দুজনে পৌঁছে যায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় নতুন রিয়েলিটি শো ‘সাত পাকে বাঁধা’র মঞ্চে। এরপরই শুরু হয় আসল গল্প।
অনেকসময় খুব সাধারণ গল্প স্রেফ পরিবেশন গুণে ভালো ‘বই’ হয়ে ওঠে। ঠিক সেই কাজটাই করলেন সম্রাট। এ ছবির গল্প সাধারণ হয়েও অন্যরকম। পর্দাজুড়ে নব্বই দশকের ছবির ছোট-ছোট মুহূর্তে ভরা। চিত্রনাট্য ও সংলাপই প্রমাণ করে পরিচালক নিজেও নব্বইয়ের বাংলা ছবির ভক্ত। বেশ কিছু দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার সিনেমার মতো রঙিন দৃশ্য এলেও, পরবর্তী দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়, ‘এসব শুধু সিনেমায় হয়, বাস্তবে নয়’।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ইপ্সিতা। বড়পর্দায়ও তিনি যথেষ্ট সাবলীল অভিনয় করলেন। অভিনয় ক্ষমতাই শেষ কথা, আবারও বুঝিয়ে দিলেন তিনি। ঋষভ নিজ পরিসরে যথাযথ। এছাড়া মানসী, অভিজিৎ, রেশমি এরা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় সাবলীল। ছবির গান শ্রুতিমধুর। ইতিমধ্যেই পুরনো গানের ছন্দে দেবদীপ, রণজয় এবং শোভনের কণ্ঠে ছবির শীর্ষসঙ্গীতটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ও হ্যাঁ, ছবির শেষে একটি বিশেষ চমক রয়েছে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে যেটা ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’ জমে গেছে। পুরনো ছবির নস্ট্যালজিয়ায় ফিরতে চাইলে একবার দেখাই যায় এই ছবি।