“প্রতিটি আঞ্চলিক সিনেমার শিকড় কোথায় আমি জানি”

তাহলে ষাটেও শুরু করা যায়। যেমন তেমন ভাবে নয়, প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে। প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘জুবিলি’তে শ্রীকান্ত রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফের প্রমাণ করে দিলেন অভিনেতার কোনও বয়স হয় না। বরং বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে বাড়তে থাকে বোধ আর ব্যাক্তিত্বের গভীরতা। যা অভিনয়কলাকে করে আরও প্রাণিত ও শানিত। শহরের পাঁচতারা হোটেলের কাফেটেরিয়ায় বসে প্রসেনজিৎ শোনালেন সৃষ্টির রহস্য। শুনলেন শ্রীকান্ত গুপ্ত

কোন জাদুতে এত প্রাঞ্জল হয়ে উঠল শ্রীকান্ত রায়?

প্রতিটি আঞ্চলিক সিনেমার শিকড় কোথায় সেটা আমার জানা আছে। এই নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছি। এখানকার ইন্ডাস্ট্রির গড়া-ভাঙা, উত্থান-পতন, ভালোমন্দ সবটাই গত চল্লিশ বছর ধরে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। বলতে গেলে ইন্ডাস্ট্রির পরিবারের মধ্যে বড় হয়েছি। অনেক কিছু শুনেছি। তার কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে আমরা কেউই জানি না। তবে একটা অরা তৈরি হয়। এরা এরকমভাবে লাইফস্টাইল লিড করত, ওরা ওইভাবে চলাফেরা করত। সবথেকে বড় কথা আমি এইসব মানুষদের ছোটবেলা থেকে নিজের চোখে দেখেছি। আমার বাবা (বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়), উত্তমকুমার ওঁরা তো একটা সময়ে নিউ থিয়েটার্স, এমপি স্টুডিওর মাইনে করা অভিনেতা ছিলেন। ‘জুবিলি’তে এই সময়টা ও তার আগেপরের কথা বলা হয়েছে । ফলে শ্রীকান্ত রায়কে জীবন্ত করে তুলতে আমার এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা খুব কাজে লেগেছে।



তাহলে কি এবার মুম্বই-কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু?

(কফির কাপে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে) একেবারেই না। কলকাতায় আমি বেশ আছি। এই বয়সে এত দৌড়াদৌড়ি আমার পোষাবে না। যদিও ‘জুবিলি’র পর প্রচুর ওয়েব সিরিজ়ের অফার আসছে। বলছে, কী কলকাতায় এত সময় নষ্ট করছেন! এতদিনে ওদের টনক নড়েছে। ‘জুবিলি’র মতো ভালো গল্প, চরিত্র পেলে অবশ্যই মুম্বই গিয়ে হিন্দিতে কাজ করব।

আরও পড়ুন: পাওয়া গেল মন খুলে হাসির রসদ

শুরুরও শুরু আছে, যার আঁতুরঘর এই কলকাতা। ভারতীয় সিনেমার পথচলা শুরু হয়েছিল এই শহরেরই ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে। এবার সেই ইতিহাসের সিরিজ় কি সাইবার বিনোদনের বিষয়বস্তু হতে পারে না?

অবশ্যই পারে। আমি মুম্বইতেও বলেছি, কলকাতা হল ভারতীয় সিনেমার পীঠস্থান। সেক্ষেত্রে শহরেরই সিনেমাওয়ালা ও পরিচালকদের উদ্যোগী হতে হবে। এই সময়টা নিয়ে আমাদের এখানকার পরিচালকদের সিরিজ় করা উচিত।

যেমন?

কেন, নিউ থিয়েটার্সকে ধরেই তো শুরু করা যায়। পুরনো স্টুডিওগুলো আস্তে-আস্তে সব হারিয়ে যাচ্ছে। ‘জুবিলি’তে সব বানাতে হয়েছিল। সেই জায়গায় তাও তো নিউ থিয়েটার্সটা এখনও টিকে আছে। সিঙ্গল স্ক্রিনগুলো যেমন আস্তে-আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে, এই স্টুডিওগুলোও একদিন মুছে যাবে। এখনও সময় ও সুযোগ আছে সেই সময়টাকে ক্যামেরায় ধরে রাখার।

আরও পড়ুন: জয়সলমেরে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, উদ্যোগী রাজস্থান সরকার

আর সেই কারণেই বয়সে ছোট হলেও পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানিকে কুর্নিশ করতেও দ্বিধা নেই আপনার

একদম তাই। ও অনেকটা পুরনো আমলের পরিচালকদের মতো। মনিটর দেখে কাজ করে না। এখনও ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মাইকে অর্ডার করে না। অভিনেতার কাছে গিয়ে খুব নিচু ও নম্র স্বরে শট বুঝিয়ে দেয়। এমনকি প্রপসটাও নিজে হাতে ঠিক জায়গায় বসায়। বিক্রমাদিত্য যে এক সময় সঞ্জয় লীলা বনশালির সহকারী ছিল, সেই ছাপ, ঘরানা ওর প্রতিটি পদক্ষেপে ফুটে ওঠে। আগেকার পরিচালকরা যেমনভাবে সিনেমা বানাতেন, বিক্রমাদিত্য ঠিক সেইভাবে এখনও সিনেমা পরিচালনা করে।

যে সময় ম্যাটিনি আইডলদের মনে করা হতো ভিনগ্রহের বাসিন্দা, যাঁরা বিচরণ করতেন রুপোলি দুনিয়ার অলীক দূরত্বে। সেই স্বপ্ন সরণির বাসিন্দা হয়েই কি থাকতে চান প্রসেনজিৎ?

উত্তমকুমার একবার শুভেন্দু চট্টোপাধ্যাকে পেট্রোল পাম্পে নেমে গাড়ির তেল ভরতে দেখেছিলেন। উত্তমজেঠু বলেছিলেন, ওই পেট্রোল পাম্পের লোকটা কিন্তু টিকিট কেটে তোমার সিনেমা দেখতে যায়। এই দূরত্বটা আমি এখনও বজায় রাখার চেষ্টা করি। তা না হলে শ্রীকান্ত রায়কে তৈরি করতে পারতাম না।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *