নতুন বছরে জমাটি থ্রিলার
ছবি: প্রতিদ্বন্দ্বী
পরিচালনা: সপ্তাশ্ব বসু
অভিনয়ে: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, সৌরভ দাস, সায়নী ঘোষ, রিনি ঘোষ
দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫১ মিনিট
RBN রেটিং: ৩/৫
পুলিশে না থেকেও তদন্তের নানা কাজে পুলিশকে সাহায্য করে সিদ্ধার্থ (সৌরভ) ও তার দুই বন্ধুর টিম। তবে তারা যে পুরোপুরি অযোগ্য, তাও নয়। তাদের মূলত একটা আইনী পরামর্শ সংস্থা চালায়। তবে প্রয়োজন পড়লে পুলিশ এসে এই ত্রয়ীর সাহায্য চায়। ছবির শুরুতেই এই তিন বন্ধুর রসায়ন দেখলে বোঝা যায় এরা টিম হিসেবে কাজ করতে কতটা দক্ষ।
ছবি শুরু হয় চিকিৎক অরুণাভ ভৌমিকের (শাশ্বত) ছেলের অপহরণের ঘটনা দিয়ে। তাকে খুঁজে বার করার জন্য পুলিশের কাছে না গিয়ে অরুণাভ সিদ্ধার্থর কাছে যায়। ওপরমহলে পরিচিতি থাকায় তারা পুলিশকে ডিঙিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে। তদন্তে উঠে আসে এক অঙ্কের শিক্ষক সুকুমার সেনের (রুদ্রনীল) নাম।
এই ঘটনার পাশাপাশি ব্যবসায়ী সুনীল দামানির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শহরের এক উঠতি রাজনৈতিক নেত্রী মায়ার (সায়নী) মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মারা যায় মায়ার এক সহযোগী গোবিন্দ সর্দার। পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি মায়া এই মামলার দায়িত্ব তার প্রাক্তন প্রেমিক সিদ্ধার্থর হাতে তুলে দিতে আসে। ফিরিয়ে দেয় সিদ্ধার্থ। সবকটি ঘটনার তদন্তে উঠে আসে সুকুমারের নাম।
আরও পড়ুন: উৎসবে সৌমিত্র স্মরণ, প্রথম ছবি ‘অপুর সংসার’
সত্যজিৎ রায় তাঁর এক কাহিনীতে ফেলুদাকে দিয়ে বলিয়েছিলেন যে হিন্দি ছবিতে তিন ঘন্টার মশলা চাই। দেড়ঘন্টা লাগবে জট পাকাতে, আর বাকি দেড় ছাড়াতে। অনেকটা সেই পথেই হেঁটেছেন সপ্তাশ্ব। তাঁর ছবির প্রথমার্ধের প্রায় এক ঘন্টা জট পাকাতে ব্যয় করেছেন তিনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে একটুও সময় নষ্ট না করে প্রথমার্ধে ছড়িয়ে যাওয়া কিছু সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান শুরু হয়েছে।
মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কাহিনীকার রিনি ঘোষ। রুদ্রনীল তাঁর প্রতিটি দৃশ্যে মন কেড়ে নেন। পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন শাশ্বত। উচ্চাভিলাষী মায়ার চরিত্রে সায়নী যথাযথ। সৌরভকে এর আগে যতটা জটিল চরিত্রে দেখা গেছে, তার তুলনায় সিদ্ধার্থর ভূমিকায় তিনি অনেকটাই একমুখী। তাই এই নতুন চরিত্র থেকে ভিন্ন ধারার কোনও অভিনয় আশা করা বৃথা। এছাড়া তানিষ্কার ভূমিকায় মাহি ও জেনির চরিত্রে রিনির অভিনয় ভালো লাগে।
আরও পড়ুন: পরবর্তী কোন ফেলুকাহিনী পছন্দ, জানালেন টোটা
সপ্তাশ্বর পূর্ববর্তী ছবি ‘নেটওয়ার্ক’-এর মতো ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ও একই দোষে দুষ্ট। প্রথমার্ধ কিছুটা ক্লান্তিকর। দৃশ্যপট পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা গতি আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সব অপ্রাপ্তি ঘুচে যায়।
ছবিতে অঙ্কিত সেনগুপ্তর ক্যামেরার কাজ ভালো। বিশেষ করে অতীতের স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফেরত আসা, বা বর্তমানের কোনো ঘটনা থেকে অতীতে যাওয়ার ট্রানজ়িশন বেশ ভালো লাগে। তবে অতীতের ঘটনা বুঝতে দর্শকের অসুবিধে হতে পারে, তাই কালার কারেকশনে সামান্য বদল আনলে বিষয়টা হয়তো জমে যেত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে এই রঙের বদল চোখে পড়লেও বাকি ছবিতে তা অনুপস্থিত।
‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র বড় প্রাপ্তি এর সঙ্গীত। দুটি গানই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আবহও অনবদ্য।
তবে গোটা ছবি জুড়ে বেশ কিছু অপ্রাপ্তিও রয়ে গেল। দু’ঘন্টার থ্রিলারে কোনও কমিক রিলিফ নেই। সেটা থাকলে দর্শকের স্নায়ুতে চাপ একটু কম হয়। বেশ কিছু ঘটনার ঘনঘটা রয়েছে এই ছবিতে যার হিসেব শেষে গিয়ে মেলে না। যেমন ছবির শুরুতেই সুনীল দামানির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কোনও সমাধান নেই। এই ধরণের তথ্য বা দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়েছে। প্লট টুইস্টও আন্দাজ করা যায়। চিত্রনাট্য আরও টানটান হওয়া উচিৎ ছিল।
সব মিলিয়ে নতুন বছরটা কোনও থ্রিলার ছবি দেখে শুরু করতে চাইলে প্রেক্ষাগৃহে একবার ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দেখে আসাই যায়।