নকশাল আন্দোলনের পুরোধার চরিত্রে নওয়াজ়
RBN Web Desk: সত্তরের দশকের কলকাতা। প্রায় প্রতিটি রাস্তায় পুলিশ পিকেট। ঘিরে ফেলা হয়েছে একটা বাড়ি। সেখান থেকেই চোরাগোপ্তা পথে বেরিয়ে এলেন নকশাল আন্দোলনের পুরোধা চারু মজুমদার। ধাওয়া করল সাদা পোশাকের পুলিশ। শুরু হলো গুলির লড়াই। এই ধরণের কোনও দৃশ্য দর্শক এবার পর্দায় আশা করতেই পারেন। সত্তরের দশকে কলকাতার উত্তাল অধ্যায়, নকশাল আন্দোলন নিয়ে নির্মীয়মান ওয়েব সিরিজ়ে চারু মজুমদারের চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি।
উত্তরবঙ্গে ১৯৬৭ সালে পুলিশের গুলিতে এগারোজনের মৃত্যুতে জ্বলে উঠেছিল আগুন। স্থান নকশালবাড়ি। প্রতিবাদ ক্রমে আন্দোলনের রূপ নেয়। সেই আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গে। তারই প্রবল ছাপ পড়েছিল কলকাতায়, বিশেষত ছাত্র রাজনীতিতে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতালের মতো চরমপন্থী নেতারা।
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
সেই সময়ে পুলিশের দুর্দমনীয় অত্যাচারের কথাও মুখে-মুখে ফেরে। বিশেষ আইনে কোনও পরোয়ানাপত্র ছাড়াই নকশাল সন্দেহে প্রচুর যুবককে গ্রেফতার করা হতো । তাঁদের মধ্যে অনেকেরই পরবর্তীকালে আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই অভিজ্ঞতাই প্রাক্তন সহকারী পুলিশ কমিশনার রুনু গুহ নিয়োগী লিখেছিলেন তাঁর ‘সাদা আমি কালো আমি’ বইতে। পাঁচ খণ্ডের এই স্মৃতিকথায় পুলিশের ভালো দিকও যেমন উঠে এসেছে, তেমনই এসেছে তাদের অন্ধকার দিকও। এই কাহিনী অবলম্বনেই পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় নির্মাণ করছেন তাঁর নতুন ওয়েব সিরিজ়।
তবে এই সিরিজ়ের নাম এখনও ঠিক হয়নি বলেই জানান সায়ন্তন। তবে প্রাথমিকভাবে ‘সাদা কপ কালা কপ’ এবং ‘ক্যালকাটা ক্রনিকলস’, নামদুটিকে ভাবা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
এই সিরিজ়ে রুনু গুহ নিয়োগীর ভূমিকায় থাকছেন রণিত রায়। এছাড়া শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জ্যোতি বসুর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন পরেশ রাওয়াল বা বোমন ইরানি। বহু জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে এই সিরিজ়ে অভিনয়ের প্রস্তাব গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
সিরিজ়টির তিনটি ভাগ থাকবে বলে জানিয়েছেন সায়ন্তন। তিনটি ভাগে থাকবে যথাক্রমে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২, ১৯৭২ থেকে ১৯৯০, এবং ১৯৯০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা। এত বড় ক্যানভাস হওয়ার জন্য ইন্দিরা গান্ধী, আজ়িজ়ুল হক, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পর্দায় দেখা যাবে। মাওবাদী নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজিকেও দেখা যেতে পারে।
সিরিজ়ের চিত্রনাট্য লিখেছেন অরিজিৎ বিশ্বাস। তবে দৃশ্যকল্পের খাতিরেই কিছু অংশে কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।
কিন্তু কেন এই রাজনৈতিক সিরিজ? সায়ন্তন মনে করেন, কলকাতা শহরের সামাজিক-রাজনৈতিক হিংসার কাহিনী এর আগে কেউ তুলে ধরেনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের পরেও বাঙালি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের ছাপ রেখেছিল। সে ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়। আর পৃথিবীর বামপন্থী রাজনীতিতে বাঙালির ভূমিকা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা পরিচালক হিসেবে তাঁর বোঝানোর দায় রয়েছে বলে মনে করেন সায়ন্তন।
২০২২ সালের জুলাই-আগস্ট নাগাদ শুরু হবে এই ওয়েব সিরিজ়ের শ্যুটিং। কলকাতা ছাড়াও মুম্বই, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাশিয়া ও চীনে শুটিং করার পরিকল্পনা রয়েছে সায়ন্তনের। একটি সর্বভারতীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে হিন্দি, বাংলা ও ইংরিজিতে মুক্তি পাবে এই সিরিজ়।