মাসের পর মাস ওয়েব ক্যামের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া যায় না: কৌশিকি
RBN Web Desk: কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া সঙ্গীত জগতের দুর্দশা নিয়ে মুখ খুললেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকি চক্রবর্তী। বর্তমান অবস্থায় লকডাউন উঠে গিয়ে আনলক চালু হলেও এখনও খোলেনি কোনও প্রেক্ষাগৃহ ও অডিটোরিয়াম। খুললেও মানুষ কবে সেখানে সাহস করে যেতে পারবেন তাও জানা নেই। ফলত সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীদের চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন কৌশিকি।
রেডিওবাংলানেট-কে কৌশিকি জানালেন, “যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় বিপদে আমরা শিল্পীরা একজোট হয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছি। মানুষ টিকিট কেটে আমাদের গান শুনতে এসেছেন, ফলে সেই প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা তুলতে পেরেছি। কিন্তু যারা এতদিন অন্যদের আনন্দ দিয়ে এসেছেন, আজ তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বহু যন্ত্রশিল্পীকে তাঁদের যন্ত্র বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বহু শিল্পী যাঁরা বাড়ি গিয়ে গানবাজনা শেখান, তাঁদের টিউশন বন্ধ হয়ে গেছে। আর যাই হোক লেটেন্সির কারণে অনলাইনে তবলার ক্লাস করানো যায় না। তাল বোঝাতে সমস্যা হয়।”
শুধুমাত্র চালডাল হলেই চলে না, তার সঙ্গে ইএমআই, বাচ্চার স্কুলের মাইনে, বয়স্কদের চিকিৎসার খরচও শিল্পীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেই উপার্জন করেন। কৌশিকির মতে, “মাসের পর মাস একটা ওয়েব ক্যামের দিকে তাকিয়ে গান করা বা কিছু বাজিয়ে যাওয়া একজন শিল্পীর মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাছাড়া এই অবস্থা কতদিনে কাটবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।” অনুষ্ঠান চালু হলেও কতজন মানুষ সাহস করে তা দেখতে আসবেন, তারপর তাঁরা কিভাবে বাড়ি ফিরবেন যেখানে ট্রেন নেই, এগুলো সবই একটা সঙ্গীতানুষ্ঠানের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।
“এর মধ্যে আমরা সকলেই কোনও না কোনও প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ছোট করে গান গেয়েছি বা পারফর্ম করেছি,” বললেন কৌশিকি। “অনেকের মনে হতে পারে যে বাড়ি থেকে অনলাইনে চারটে লাইন গান গাইলে কী এমন ক্ষতি হয়? কিন্তু আমার চারলাইন গাওয়া আর একজন এমন মানুষের গাওয়া যিনি গান গেয়ে উপার্জন করেন না, এই দুটো এক নয়। তাছাড়া এইভাবে গান গাওয়ার ফলে আমার সঙ্গে যাঁরা সঙ্গত করেন তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন, কেন না তাঁদের প্রয়োজনটাই আর পড়ছে না।” এইভাবে বিনামূল্যে গান শোনার অভ্যাসের ফলে গোটা সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রি ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সিনেমার মতোই ছিল যে জীবন
তবে অনলাইন কনসার্টের মাধ্যমে অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটানো যেতে পারে বলে মনে করেন কৌশিকি। তাঁর মতে “উপযুক্ত মূল্য দিয়ে শ্রোতারা টিকিট কেটে গান শুনলে শিল্পীরা যোগ্য মর্যাদা পাবেন। আমরাও তাঁদের এমন একটা প্ল্যাটফর্মে গান শোনাতে পারি যেখানে অভিজ্ঞতাটা যতটা সম্ভব প্রেক্ষাগৃহের মতো করা যায়। একজন শ্রোতা যখন টিকিট কেটে গান শুনতে আসেন তখন তিনি শুধু বন্দিশ বা তান শুনতে আসেন না। মঞ্চ, আলো, ঘোষণা, শিল্পীর শারীরি ভাষা, তাঁর প্রেজ়েন্টেশন, সাজগোজ, কথাবার্তা এই সবকিছু একসঙ্গে উপভোগ করতে চান।”
সেই ধরণের একটা অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে চাইছে ‘শান্তি’ অনলাইন কনসার্ট, যেখানে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে শ্রোতারা একটা সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আনন্দ পাবেন। এই কনসার্ট সিরিজ়ে একেবারে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করা থেকে অনুষ্ঠান শেষে হাততালি, শ্রোতারা পুরোটাই অনুভব করতে পারবেন। “এর ফলে শিল্পীরাও যোগ্য সন্মান পাবেন আবার শ্রোতারাও তাঁদের প্রাপ্যটুকু উপভোগ করতে পারবেন,” বললেন কৌশিকি।