কেন একটি শিশুর আত্মহনন? কারণ খুঁজতে আসছে ‘কিশলয়’

RBN Web Desk: বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে জেট গতিতে ছুটে চলেছে প্রায় সকলেই। জীবনের অস্বাভাবিক গতিতে অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনধারা, পাল্টে যাচ্ছে সম্পর্কের সমীকরণ। তবে এই ইঁদুরদৌড়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। সদ্য শৈশবে পা দিয়েই তাদের জড়িয়ে যেতে হচ্ছে জীবনের জটিলতায়। অভিভাবকরা চাইলেও তাদের এর থেকে দূরে রাখতে পারছেন না। এই ভাবনা থেকেই পরিচালক আতিউল ইসলাম তৈরি করেছেন ‘কিশলয়’। ছবিতে অভিনয় রয়েছেন দেবলীনা দত্ত, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, দেবরাজ মুখোপাধ্যায়, বিবেক ত্রিবেদী, ফাহিম মির্জা ও অদৃজা মুখোপাধ্যায়। 

ছবির কেন্দ্রে রয়েছে একটি শিশুর মৃত্যু। তবে সেই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। সাত বছরের একটি শিশুকন্যার আত্মহত্যা এবং তার পরবর্তী ঘটনাই ‘কিশলয়’-এর বিষয়বস্তু। এত অল্প বয়সে কোনও শিশুর মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে পারে এমন ভাবাটা কিছুটা অদ্ভুত হলেও হয়তো অবাস্তব নয়। সভ্যতার লাগাতার পরিবর্তনশীল সংজ্ঞা ক্রমশ মানুষকে আয়নার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করছে প্রতিনিয়ত। কেন একটি শিশু খেলে বেড়াবার বয়সে মৃত্যুর পথ বেছে নিল, সেই নিয়েই ছবি জুড়ে চলবে দুই উকিলের আইনি লড়াই। তার মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? পরিবার নাকি সমাজ?

আরও পড়ুন: শেষ যাত্রায় ব্রাত্য, পথ হেঁটেছিলেন মাত্র কয়েকজন

ছবি সম্পর্কে আতিউল জানালেন, “আমরা ভাবি একটা ছয়-সাত বছরের শিশু আনন্দে থাকবে, খেলে বেড়াবে। কিন্তু সবসময় তেমনটা হয় না। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে এক একসময় আর্থিক সংকট এতটাই বেশি হয়ে দাঁড়ায় যে তার আঁচ অতটুকু শিশুর গায়েও এসে লাগে। স্কুল সংক্রান্ত নানা বিষয়ে তার সমবয়সী বন্ধুদের কাছে কোণঠাসা হতে-হতে একটা সময় সে মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু এমন একটা ঘটনা সে কেন ঘটাল, বা আদৌ সে আত্মহত্যার মানে জানে কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বড়রা যে চাপ নিতে শিখে যায় ছোটরা অনেক সময়েই সেটা নিতে পারে না।  কিন্তু তার জন্য দায়ী কে? সেই নিয়েই আমার এই ছবি।”

আতিউল বরাবরই তাঁর ছবির মাধ্যমে সমাজকে কিছু বার্তা দিতে চান বলে জানালেন। তাই এই জটিল মনস্তাত্বিক বিষয়কে তিনি বেছে নিয়েছেন।




ছবিতে শিশুটির বাবা-মায়ের পক্ষের আইনজীবীর ভূমিকায় রয়েছেন দেবলীনা। চরিত্রটি তাঁর নিজের খুব পছন্দ হয়েছে বলে জানালেন তিনি। “শুনলে হয়তো মনে হতে পারে এতটুকু একটা বাচ্চা কিভাবে আত্মহত্যা করতে পারে কিন্তু একটু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে যে সময় আমরা ছোট ছিলাম তখন ক্লাস নাইন টেনের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যেত। বর্তমানে সেই প্রবণতা আরও কম বয়সের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে, আর সেটা সমাজের পরিবর্তনের ফলেই,” বললেন তিনি।

দেবলীনা মনে করেন এখন শৈশব বলে কিছুই নেই। সমাজ শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবে। ছোটদের অভাব অভিযোগ নিয়ে ভাবার সময় কারওর নেই। এর আগে টেলিভিশন ধারাবাহিকে একাধিকবার আইনজীবির ভূমিকায় অভিনয় করলেও ছবিতে এই প্রথম সেরকম একটি চরিত্রে রয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: এবারও বন্ধ উত্তমকুমারের বাড়ি

“ছবিটা পুরোটাই কোর্টরুম ড্রামা,” জানালেন দেবলীনা। “বিষয়টা খুব সংবেদনশীল, আর যুগোপযোগী। ছবিটার যে উদ্দেশ্য সেটা আমার মুখ দিয়েই বলানো হয়েছে। এটাই আমার সবথেকে ভালো লাগার জায়গা। কী পরিমাণ চাপের কারণে একটা ছোট্ট শিশুকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয় এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়কে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে ‘কিশলয়’।”

রাজ্যে প্রেক্ষাগৃহ খুললেই মুক্তি পাবে ছবিটি।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *