‘তখন কে তুমি তা কে জানত’
ছবি: খেলা যখন
পরিচালক: অরিন্দম শীল
দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৩ মিনিট
অভিনয়ে: মিমি চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, অলকানন্দা রায়, হর্ষ ছায়া, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, করণ হরিহরণ
RBN রেটিং: ★★★★★★★☆☆☆
‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে/তখন কে তুমি তা কে জানত,’ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ থেকেই কিছুটা অনুপ্রেরণা নিলেন অরিন্দম। ব্যোমকেশ, মিতিন, শবরের মতো গোয়েন্দাদের সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অরিন্দম এখন বেশ পাকা রাঁধুনি। তাই ‘খেলা যখন‘ নিয়ে তাঁর থেকে প্রত্যাশা থাকবে, এ জানা কথা। তবে এ ছবি কোনও সিরিজ়ের অন্তর্গত নয়। অন্তত এখনও নয়।
ছবির গল্প ঊর্মিকে (মিমি) ঘিরে। গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে নিজে কোনওমতে বেঁচে ফিরলেও, প্রাণ হারায় তার একমাত্র ছেলে। অবশ্য ঊর্মি প্রাণে বাঁচলেও সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলে তার স্মৃতিশক্তি। আট মাস কোমায় থাকার পর তার জ্ঞান ফেরে। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় অল্প কিছু স্মৃতি ফিরে এলেও সেগুলো এক সুতোয় জুড়তে পারে না সে। স্বামী সাগ্নিক (অর্জুন) এবং শ্বশুর (বরুণ), শাশুড়ি (অলকানন্দা) ও ননদ (সুস্মিতা) ক্রমাগত চেষ্টা করে ঊর্মিকে সবকিছু মনে করাতে। তবু ঊর্মির মনে পড়া আবছা স্মৃতির সঙ্গে তাদের কথার মেলবন্ধন হয় না। তাহলে কি ঊর্মি কড়া ডোজ়ের ওষুধের কারণে হ্যালুসিনেট করছে?
আরও পড়ুন: থ্রিলারে মূল চরিত্রে কিয়ারা
এরই মাঝে মধুসূদন (অর্ণ) নামের ব্যক্তি ঊর্মিকে ডেকে বলে তার নাম নাকি মেহেজবিন আর তার ছেলে নাকি এখনও জীবিত। ঊর্মির জীবনে আবার সবকিছু ঘেঁটে যায়। সাগ্নিক জানায় সে নিজের হাতে ছেলের মৃতদেহ দাহ করেছে তাই ঊর্মি যা শুনছে সবই ভুল। ঊর্মি নিজের বাবার (হর্ষ) সঙ্গেও টেলিফোনে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারে না। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বিদেশে বসবাসকারী তার বাবা চার মিনিটের মধ্যেই ফোন কেটে দেয়। আবার এক দোকানে গিয়ে নিজের নাম সই করতে গিয়ে ঊর্মি লেখে অপর্ণা গোস্বামী। বারবার নিজের নাম সই করতে গিয়ে এই নামই কেন লেখে সে। ঊর্মি আসলে কে? অপর্ণা নাকি মেহেজবিন? কেনই বা তার পরিবার তাকে চোখে-চোখে রাখছে? প্রত্যেক রাতে বন্দুক হাতে তার শ্বশুর আর স্বামী কেনই বা বাড়ির চারদিকে পাহারা দেয়?
আরও পড়ুন: ‘আপত্তি উঠবে বলে কি নতুন কাজ হবে না?’
‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’তে সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন, তিন ঘণ্টার হিন্দি ছবিতে দেড়ঘণ্টা লাগে জট পাকাতে, দেড়ঘণ্টা ছাড়াতে। অরিন্দমের দু’ ঘণ্টার ছবিতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনওরূপ জট ছাড়ানো গেল না। শেষে যখন একাধিক প্রশ্ন মনে ভিড় করছে, তখন বেশ তাড়াহুড়ো করেই পরপর মূল গিঁটগুলো খুলে ফেলা হলো। কিছু প্রশ্নের উত্তর তখনও বেশ অধরা। অবশ্য ছবির শেষের ট্যুইস্ট সিক্যুয়েলের ইঙ্গিতবাহী হওয়ায় সেই প্রশ্নগুলির উত্তর হয়তো পরে পাওয়া যাবে। ভারতের বিভিন্ন ভাষার পর এবার বাংলাতেও আন্তর্জাতিক অপরাধী কার্যকলাপ ফুটে উঠল। এর জন্য পরিচালককে সাধুবাদ। তবে ঘটনাগুলি আরও বিস্তারিতভাবে দেখানো হলে ভালো লাগত।
অভিনয়ে প্রত্যেকেই যথাযথ। মিমি প্রতিটি স্টান্টই নিজের চেষ্টায় করেছেন তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। অ্যাকশন দৃশ্যে বরুণ, অলকানন্দা, সুস্মিতা অত্যন্ত ভালো। একটি বিশেষ দৃশ্যে করণও বেশ ভালোভাবেই উতরে দিলেন। ছবির আবহসঙ্গীতের জন্য বিক্রম ঘোষের ধন্যবাদ প্রাপ্য।
বর্তমানে যত্রতত্র থ্রিলার তৈরির মাঝে ‘খেলা যখন’ আদপে একটি হুডানইট গোত্রের ভালো ছবি। তাই ডিসেম্বরের ঠান্ডায় জমজমাট থ্রিলার দেখতে হলে এ ছবি একবার দেখাই যায়।