সাহিত্যনির্ভর বাংলা ছবি প্রযোজক পায় না, হতাশ ইন্দ্রাশিস

RBN Web Desk: “সেই ২০১৩ থেকে এই ছবিটা করার চেষ্টা করেছি। তখন সম্ভব হয়নি। ভালো বাংলা ছবি তৈরির ক্ষেত্রে প্রযোজক পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।” তাঁর নতুন ছবি ‘নীহারিকা’র ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানে এমনটাই বললেন ইন্দ্রাশিস আচার্য। বিশিষ্ট সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভয়’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘নীহারিকা’ তৈরি করেছেন ইন্দ্রাশিস। অভিনয়ে রয়েছেন শিলাজিৎ মজুমদার, অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, মল্লিকা মজুমদার, প্রিয়াঙ্কা গুহ, রাজেশ্বরী পাল, শশী গুহ, জুঁই বাগচী, অমিত চক্রবর্তী, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, মলয় রক্ষিত, প্রবাল মুখোপাধ্যায়, রোহিণী চট্টোপাধ্যায় ও শ্রাবণী রায়।

থ্রিলার ও গোয়েন্দা গল্পের বাইরে গিয়ে ইদানিং ক্লাসিক যুগের সাহিত্যনির্ভর ছবির দিকে কিছুটা হলেও ঝুঁকছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি। বড়পর্দায় উঠে আসছে গ্রামবাংলা বা মফস্বলের টুকরো চিত্র। যদিও এই ধরনের ছবি দর্শক মনে কতটা প্রভাব ফেলছে সেই হিসেব আসতে সময় লাগবে, তবু কিছু পরিচালক বাঙালি দর্শকের স্বাদ বদলের লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

আরও পড়ুন: পাল্প ফিকশন লেখক শ্রীস্বপনকুমারের ভূমিকায় পরাণ

“আমার ফান্ডিং ছিল না,” বললেন ইন্দ্রাশিস। “সতেরজন প্রযোজক আমার এই ছবিটা প্রযোজনা করেছেন। যে যখন যেমন পেরেছেন আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাহিত্যনির্ভর গল্প নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের, কিন্তু সাপোর্ট পাই না। আমরা যারা ভালো কাজ করতে চাইছি, বিদেশে বাংলা ছবিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি, তারা প্রযোজক পাই না। আমার পাঁচটা ছবির প্রতিটাই বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। ‘পার্সেল’ গোল্ডেন টাইগার পেয়েছে। ‘পিউপা’ ১৭টা পুরষ্কার পেয়েছে। তারপরেও আমি এবং আমার মতো বেশ কয়েকজন পরিচালক যারা ভালো কাজের উদ্যোগী, তাদের প্রযোজকের অভাব।”

তবে অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কিছু নাম উঠে আসছে। বাংলা ছবির আঙ্গিক কিছুটা হলেও পাল্টাচ্ছে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। “আমার কাছে ‘নীহারিকা’র গল্পটা অত্যন্ত সাহসী এবং প্রাসঙ্গিক,” বললেন ইন্দ্রাশিস।

বাংলা ছবি

টিম ‘নীহারিকা’র সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

‘নীহারিকা’ দীপা নামের একটি মেয়ের জীবনকে কেন্দ্র করে। তার ছেলেবেলা কেটেছে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশে যেখানে আদর্শ ও নিরাপত্তার কোনও স্থান ছিল না। পারস্পরিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ যেখানে আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। একটা সময় সে বাড়ি ছেড়ে শিমুলতলায় তার ছোটমামার কাছে চলে আসে। কৈশোরে দেখা পরিবেশের একেবারে বিপরীত মেরুতে বিচরণ করে তার মামারবাড়ি। এখানে এসে নিঃসঙ্গ পরিবেশে কতটা পরিবর্তন হয় তার জীবনের, কীভাবে পাল্টে যায় দৃষ্টিভঙ্গি, এইসব নিয়েই এগোবে ছবির গল্প। 

ছবির প্রধান চরিত্রে রয়েছেন অনুরাধা। “দীপাকে ঠিক সাদা বা কালো বলা চলে না। বিভিন্ন স্তর রয়েছে। দীপার জীবনটা প্রায় পুরোটাই অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে। খুব জটিল একটা চরিত্র। তবে বাস্তবের অনুরাধার সঙ্গে এই চরিত্রের কোনও মিল নেই,” জানালেন তিনি।

“আমার চরিত্রের নাম রঙ্গন”, বললেন অনিন্দ্য। “এটা নব্বই দশকের শেষের দিকের গল্প। শিমুলতলা এই ছবির অনেকটা জুড়ে রয়েছে। কলকাতার জীবনযাপন থেকে একেবারে আলাদা একটা জীবন এখানে। সৎ পথে পরিশ্রম করায় বিশ্বাসী হলেও রঙ্গনের জীবনে নানারকম টানাপোড়েন আছে। দীপার জীবনে রঙ্গন এবং তার ছোটমামা ও মামীমা কী প্রভাব বিস্তার করে পুরো ছবিটা সেটা নিয়েই।” 

আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?

দীপার ছোটমামার চরিত্রে রয়েছেন শিলাজিৎ। তিনি জানালেন, “আমার চরিত্রটা বাস্তবের মতোই জটিল বলা যায়। মধ্যবয়স্ক একটা চরিত্র যার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় অস্তমিত। সম্পর্ক খারাপ বলব না, কিন্তু ওই যে যার মতো থাকে। এই অবস্থায় তার ভাগ্নী দীপা সেই বাড়িতে আসে। দীপার আগমনে সেই বাড়ির পরিবেশ কেমন হয়, এই নিয়েই ছবি। অনুরাধা অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছে। ছবিটা ওরই। আমরা সকলে ওকে সঙ্গ দিয়েছি বলা চলে।”

ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন ইন্দ্রাশিস নিজেই। সুর করেছেন জয় সরকার। চিত্রগ্রহণে ছিলেন শান্তনু দে, সম্পাদনায় লুব্ধক চট্টোপাধ্যায়।

২১ জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে ‘নীহারিকা’। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *