একলা হয়ে যাওয়া শিশুমন নিয়ে ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’
RBN Web Desk: প্রযুক্তির দাপট আর ব্যস্ত জীবনের যুগলবন্দী মিলে, পারিবারিক আনন্দ বা দাম্পত্যের স্বাভাবিক ছন্দ সবই আজ বিপর্যস্ত। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। সঙ্গীর অভাবে ক্রমশ স্মার্টফোনের জগতে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে তারা। এমনই এক প্রাসঙ্গিক ও জরুরি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আসছে পরিচালক শিবাজী দত্তর ছবি ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’ (Khelaghar Bandhte Legechi)। অভিনয়ে আছেন জয় সেনগুপ্ত (Joy Sengupta), বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় (Basabdatta Chatterjee), প্লাবন দেব, ধ্রুব মুখোপাধ্যায়, সকৃত মুখোপাধ্যায়, শ্রীজা ভট্টাচার্য, রঞ্জন দাস, সুজয় সান্যাল, সুমন বসু, প্রীতম দাশগুপ্ত ও আল্পনা মজুমদার সাহা।
একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন পার্থসারথি দেব। ট্রেলার মুক্তির দিন তাঁকে স্মরণ করে উঠে এল নানা স্মৃতিচারণ।
ছবির কাহিনী অমিতাভ (জয়) ও হেমনলিনীর (বাসবদত্তা) সংসারকে ঘিরে। বাবা প্রবোধবাবু (পার্থসারথি) ও দুই ছেলে মেঘ ও বিদ্যুৎকে রেখে কর্তা-গিন্নি দুজনকেই প্রতিদিন পেশার প্রয়োজনে বেরিয়ে পড়তে হয়। দুজনেই প্রবল ব্যস্ত, দুজনেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ফলে ক্রমশ অবহেলিত হতে থাকে দুই সন্তান। নিজেদের অনুপস্থিতির ক্ষতিপূরণ দিতে বাচ্চাদের হাতে দামী ফোন তুলে দেয় বাবা-মা। দাদু চেষ্টা করেন নাতিদের সঙ্গ দিতে। কিন্তু উঠতি বয়সের কিশোর স্মার্টফোনে ডুবে যেতে থাকে ক্রমশ। বর্তমানে প্রতিটি ঘরে একই ছবি, কী এর সমাধান?
আরও পড়ুন: থাকছেন না দিব্যেন্দু
জয় জানালেন, “খুব সুন্দর সম্পর্কের ছবি। একটা ছোট পরিবার যেমন হওয়া উচিত। কিন্তু আরও উন্নতির নেশা, অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা ধীরে-ধীরে তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর অতটুকু বাচ্চাকে একটা অত দামী ফোন দেওয়া মানে সে সেটার মূল্য বুঝল না। তার কল্পনা শক্তি তো ওখানেই শেষ হয়ে গেল। এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে সেটা নিয়েই এই ছবি। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে খুব প্রাসঙ্গিক একটা বিষয়।”
জয় নিজে বিনোদনমূলক ছবির পক্ষে। তবে সেই বিনোদনের মধ্যে দিয়ে সমাজকে কোনও সুস্থ বার্তা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
“আমরা শিল্পীরা কাজের মধ্যে দিয়ে চাইব মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে যাক, যেটা এই মুহূর্তে খুব জরুরি,” বললেন বাসবদত্তা। “আমরা প্রত্যেকেই জানি এখন ফোন আর ইন্টারনেট ছাড়া আমরা সকলেই অচল। তবে প্রয়োজনের বাইরে সেটাই যদি আমাদের একমাত্র বিনোদন হয়ে ওঠে তার ফল ভালো হয় না। আর বাবা-মায়েদের একটাই কথা বলার, কাজের ব্যস্ততা, প্রয়োজনীয়তা দুই-ই থাকবে। তবু তার মধ্যেই সন্তানদের জন্য একটু সময় বার করা খুব জরুরি।”
আরও পড়ুন: সত্যজিতের আরও দুটি ছবি সংরক্ষণের কাজ শুরু
ছবিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা থাকছে, যা বাংলা ছবিতে এই প্রথমবার দেখা যাবে বলে জানালেন শিবাজী। ফোনের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ছোট্ট এক এআই চ্যাটবট সারাক্ষণ সবরকম বিনোদন দিতে থাকে মেঘকে।
শিবাজী বললেন, “আমি ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ দেখে বড় হয়েছি। ‘ছুটি ছুটি’র জন্য বসে থাকতাম গরমের ছুটিতে। আমরা রোজ মাঠে খেলতাম। কিন্তু আজকের বাচ্চাদের না আছে খেলার মাঠ, না আছে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক। আজকাল কেউ বাবা মায়ের সঙ্গে গল্প করে না। এরা কী ভীষণভাবে একা হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের জগৎ ছাড়া কারও সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই। এই ব্যাপারটা আমাকে ভাবিয়েছে। তাই এই ছবিটার মাধ্যমে আমি দেখাতে চেয়েছি যদি একটু অন্যভাবে চেষ্টা করা যায়। ব্যস্ত তো সবাই, কিন্তু একটু আন্তরিকতা দিয়ে ওদের অবস্থাটাও ভেবে দেখা দরকার।”
ছবিতে সুর করেছেন প্রীতম দেবনাথ।
২৪ মে মুক্তি পেতে চলেছে ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’।