প্রত্যেক ছবি থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি: বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী

শতাধিক ছবিতে অভিনয়। বাংলা, হিন্দী ছাড়াও তেলুগু, মালায়লী ও কন্নড় ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। পরিচালক রণদীপ সরকারের ছবি নূপুর-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। তার আগে অভিনেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন কেন এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হলেন, এবং বাংলা ছবি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা।

আরেকবার বাবার চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে

তা ঠিক। জিৎ, দেব, কোয়েল, প্রায় সব নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্রে অভিনয় করে ফেলেছি বোধহয় এতদিনে (হেসে)।

তাহলে রণদীপের ছবিতে সেই একই চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হলেন কেন?

প্রথম কারণ, গল্প। খুব সুন্দর একটা গল্প আছে নূপুর-এ। বাংলা ছবিতে এই গল্প বলার ব্যাপারটা মোটামুটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। দর্শক হলে গিয়ে এমন ছবি দেখতে চায়, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা গল্প থাকবে। দ্বিতীয় কারণ রণদীপ নিজে। ওর সাথে আগেও কাজ করেছি আমি। অল্পবয়সী পরিচালক হলেও, ও কি বানাতে চায় তার সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা আছে ওর। আমার মনে হয়েছে বাবার চরিত্র হলেও, অভিনয় করার যথেষ্ট সুযোগ আছে নূপুর-এ, যা অনেক ছবিতেই পাই না। তাছাড়া বেশ একটা মাটির গন্ধও আছে। এই সব কারণেই রাজি হলাম।

গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই

আপনি যখন কোনও ছবি সই করেন, তখন কি দেখে রাজি হন? বড় সংস্থা, চিত্রনাট্য, না পরিচালক, কোনটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?

সত্যি কথা বলতে কি আমি ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একেবারেই সিলেক্টিভ নই। এটা আমার অভিনয় দর্শন বলতে পারো। অভিনেতা হিসেবে আমার কাছে যা কাজ আসে, সবই আমি করি। আমি কোনওদিনই পরিচালক বা কোন সংস্থা ছবিটা প্রযোজনা করছে, এইসব ভেবে কাজ করিনি। প্রত্যেকটি কাজই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য প্রত্যেক ছবি থেকেই আমি কিছু না কিছু শিখি। এবং সেটা শুধু পরিচালকের থেকেই নয়। সহঅভিনেতা, কলাকুশলী, সবার কাছ থেকেই শিখেছি এবং সেটা আমাকে অভিনেতা হিসেবে আরও সমৃদ্ধ করেছে। একই দিনে যদি দুটো ছবির কাজ পড়ে যায়, তাহলে অনেক সময় একটাকে ‘না’ বলতেই হয়। সেরকম না হলে আমি কাজ ফিরিয়ে দিই না কখনও।

এত বছর ধরে অনেক পরিচালকের সাথেই কাজ করেছেন আপনি। এক একজন পরিচালকের তো এক এক রকম ভাবে কাজ করার পদ্ধতি থাকে। সবার সাথে মানিয়ে নেন কি ভাবে?

অভিনেতার কাজই হল পরিচালক যা বলছেন সেটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। আমাকে বুঝতে হবে পরিচালক কি চাইছেন। শটটা বুঝে নেওয়ার পর আমি নিজের মত করে সেটা অভিনয় করি। এটা সত্যি কথা যে একজন পরিচালক যে ভাবে একটা ছবি ভাবছে, সেটা অন্য আরেকজনের থেকে ভিন্ন হবেই। যার ছবিতে যেরকম দাবী থাকে, আমি সেরকম ভাবেই কাজটা করি।

Advertisement

ইদানিং বাংলা ছবি আগের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় তৈরি হচ্ছে কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে হলের সংখ্যাও কমেছে। এছাড়াও পরিচালক এবং অভিনেতাদের একটা অভিযোগ আছে যে বাংলা ছবিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শো দেওয়া দেওয়া হয় না মাল্টিপ্লেক্সে। এই সংকট থেকে বাংলা ছবি কিভাবে বার করা সম্ভব?

দেখো, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এখানে রাজ্য সরকারের একটা বড় ভূমিকা আছে। দক্ষিণ ভারতে দেখেছি ওখানকার ছবি অনেক শো পায়, এবং সেটা শুধু বড় শহরেই নয়। রাজামুন্দরির মত অপেক্ষাকৃত ছোট শহরেও ওদের ভাষার ছবি দেখানো হয়। এখানেও সেই সরকারী উদ্যোগটা দরকার। এছাড়াও নতুন যে সব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষকে জানানোটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে এখনও অনেক প্রযোজক আছেন যাঁরা বাংলা ছবিতে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেন। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও পরিচালক-অভিনেতাদের মধ্যে নতুন ছবি করা নিয়ে সেই পাগলামোটা দেখতে পাই।

দক্ষিণের একটা ছবি কিন্তু সেখানকার সবকটা রাজ্যেই চলে, সে মূল ভাষাতেই হোক, বা ডাব্‌ড করেই হোক। অদ্ভূত ভাবে পূর্ব ভারতে এই সংঘবদ্ধ ব্যাপারটা নেই। বাংলা ছবি উড়িষ্যায় দেখানো হয় না, বা অসমের ছবি বাংলায় দেখানো হয় না

একদম তাই। আমরা যদি কিছুটা আইনী পরিবর্তন এনে বাংলা ছবি বাংলাদেশে দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারতাম, তাহলেই কিন্তু একটা বিরাট বাজার খুলে যেত। তাছাড়া বাঙালি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু মুশকিল হলো বড় প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া সেই দর্শকের কাছে পৌঁছনোর আর্থিক ক্ষমতা বাকি প্রযোজকদের নেই। এখানে সরকার সেই সব ছবি বহির্বিশ্বের দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

বর্তমানে ইন্টারনেটে ছবি দেখার চল অনেকটাই বেড়েছে এবং সেটা গোটা বিশ্বেই একটা নতুন ট্রেন্ড বলা যায়। এক্ষেত্রে কি চলচ্চিত্র শিল্প আরও সংকটে পড়বে বলে আপনার মনে হয়?

দেখো, প্রযুক্তিকে কখনওই আটকে রাখা যায় না। যেটার সময় এসে গেছে, সেটা আসবেই। এবারে সেই প্রযুক্তিকে আমি কিভাবে নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারছি সেটাই আসল কথা। টেলিভিশন বা ভিডিওতে যখন ছবি দেখানো শুরু হল, তখনও একটা গেলো-গেলো রব উঠেছিল। কিন্তু তাতে তো সিনেমা শিল্প উঠে যায়নি। আমি তিন বছর যাত্রায় অভিনয় করেছি এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে গেছি। সেখানকার দর্শক কিন্তু হলে বা টেলিভিশনেই ছবি দেখেন। স্মার্টফোনে ছবি দেখতে তাঁরা অভ্যস্ত নন। তবে ওয়েব মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে এখন যা হয়ত তথাকথিত বড় পর্দায় দেখানো সম্ভবপর নয়।  

ছবি: বাংলামুভিজ়

Amazon Obhijaan

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Prabuddha

Foodie, lazy, bookworm, and internet junkie. All in that order. Loves to floor the accelerator. Mad about the Himalayas and its trekking trails. Forester in past life. An avid swimmer. Also an occasional writer and editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *