রূপকথার জগতে ডুব দেবে তথাগতর ‘ভটভটি’

কলকাতা: শৈশবে সকলেই রূপকথা পড়ে। শিশু মন তার কল্পনার জগতে সেই রূপকথাকেই সত্যি বলে ধরে নেয়। তার কাছে পক্ষীরাজ ঘোড়া, হীরামন পাখি, মৎস্যকন্যা, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি, সবই যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা রেখে সেই সব রূপকথার চরিত্ররা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তখন আর সেই গল্পে বিশ্বাস করে না। কিন্তু কেউ কেউ থাকে যারা বাস্তবের কঠিন দুনিয়াকে চেনার পরেও মনের গোপন কোণে যত্ন করে লালন করে সেই কল্পনার জগৎটাকে। তাদের মধ্যেই একজন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। এই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও অবক্ষয়ের যুগেও তিনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। সেই স্বপ্নের জগতের সঙ্গে সকলের পরিচয় করাতেই তথাগত নিয়ে আসছেন তাঁর নতুন ছবি ‘ভটভটি’।

ছবির মূল দুই চরিত্রে থাকছেন ঋষভ বসু ও বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও রয়েছেন দীপঙ্কর দে, মমতা শংকর, দেবলীনা দত্ত, মনু মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী, তমাল রায়চৌধুরী, রজতাভ দত্ত, সঞ্জীব সরকার ও লামা হালদার। একটি বিশেষ চরিত্রে আছেন তথাগত নিজেও।  

ছবির কাহিনী ভটভটি নামের একটি ছেলেকে নিয়ে। তার আসল নাম কেউ জানে না, সকলে তাকে ভটভটি বলেই ডাকে। যদিও সে বাস করে এই ইঁট কাঠ পাথরের শহরেই, কিন্তু তবু তার স্বপ্ন এক অজানা অচেনা রূপকথার রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার।রোজ বন্ধুদের সঙ্গে জলে ঝাঁপ দিয়ে যখন সে পয়সা কুড়োতে যায়, তখন জলের নীচে কারা যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

আরও পড়ুন: তাশি গাঁওয়ে একদিন

ভটভটি যেখানে থাকে সেই জায়গাটার নাম জাহাজ বস্তি। তার মনে হয় সত্যি বুঝি তারা জাহাজে রয়েছে। তার এই কল্পনার দুনিয়ার সব কথা সে শুধু জানায় তার পাখি দিদি আর হরিশচন্দ্র ডোমকে। এরা দুজন তার সব থেকে কাছের মানুষ।

একদিন হঠাৎ করেই ভটভটির স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায়। জলের তলার দুনিয়াটা ভটভটির জন্য তাদের দরজা খুলে দেয়। সেই দুনিয়ায় আছে জলপরী ও তার সঙ্গীসাথীরা। ভটভটি চায় তাদের সকলকে তার চেনা পৃথিবীতে নিয়ে আসতে। কিন্তু এই অবিশ্বাসে ভরা পৃথিবী কি ভটভটির নতুন বন্ধুদের মেনে নেবে? রূপকথার আড়ালে চেনা পৃথিবীর রূপকেই চেনাবে তথাগতর ছবি। 

আরও পড়ুন: বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ

চারপাশে সবাই যখন থ্রিলার বানাচ্ছে সেখানে হঠাৎ রূপকথার জগতে ডুব কেন? উত্তরে তথাগত জানালেন, “আমার বন্ধু, লেখক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একদিন ঢাকুরিয়া লেকে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যের অন্ধকারে জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মনে হল হঠাৎ যদি এখান থেকে লকনেস মনস্টার উঠে আসে। মনে হচ্ছিল আমি যেন স্কটল্যান্ডে আছি। তারপর ভাবলাম স্কটল্যান্ড কেন, এখানেও তো জলপরীর কথা ছোটবেলা থেকে শুনেছি। তাহলে জলপরীও তো উঠে আসতে পারে। এই সব ভাবতে গিয়েই গল্পটা মাথায় আসে। আসলে আমার কাছে বাস্তবটাই অদ্ভুত লাগে। তার চেয়ে রূপকথা অনেক সহজ সরল।”

তাহলে কি শুধু রূপকথাই থাকবে ছবিতে? “ঠিক তা নয়,” বললেন তথাগত। “বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক বা রাজনৈতিক নানান দিক উঠে আসবে, তবে সেটা রূপকথার আঙ্গিকেই। কারণ ওটাই একমাত্র সত্যি। আবার কোথাও গিয়ে হয়ত ফ্যান্টাসি আর রিয়ালিটি মিলে যাবে।” 

আরও পড়ুন: গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই

ঋষভ-বিবৃতি ছাড়াও ছবিতে আরও দুটি জুটি থাকছে। দ্বিতীয়টি দেবলীনা ও তথাগতর। দেবলীনা রয়েছেন পাখির চরিত্রে। তিনি জানালেন, “পাখি একজন যৌনকর্মী। সে ভটভটির সবচেয়ে কাছের মানুষ। পাখিও জাহাজ বস্তিতেই থাকে। তার একজন বাঁধা বাবু রয়েছে। সেই চরিত্রটা করছে তথাগত।”

এই ছবির একমাত্র বাস্তববাদী চরিত্র তথাগতর। ‘ভটভটি’তে এই একটি মাত্র মানুষ কোনও স্বপ্ন দেখে না।

ছবিতে দীপঙ্কর ও মমতা শংকর স্বামী-স্ত্রী। দীপঙ্কর জানালেন, “আমাদের সকলের মনেই একটা রূপকথার জগৎ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবের কঠিন আঘাতে সেই জগতের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়। এমনই এক মানুষ সরোজ কুমার মজুমদারের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। সরোজ একসময় নকশাল আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, যদিও তা সফল হয়নি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে সরোজ আজ সফল, সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। তবু সেই স্বপ্নটা যেন কোথাও অবচেতন মনে এখনও বাস করে। ভটভটির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর, তার স্বপ্নের কথা শুনে সরোজের মনে পড়ে যায় পুরোনো কথা। বন্দুক হাতে তুলে নেন তিনি।”

আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

মমতা শংকর জানালেন, “আমার চরিত্রটা ছোট হলেও ছবির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরোজের স্ত্রী হিসেবে আমারও কিছু স্বপ্ন ছিল, যা নিয়ে একটা সময় আমিও তার পাশে দাঁড়িয়েছি। এর বেশি এখনই কিছু বলব না।” 

ছবিতে সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন ময়ূখ ভৌমিক, ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি প্রতীপ মুখোপাধ্যায়। ছবির পোশাক পরিকল্পনায় রয়েছেন দেবলীনা। যেহেতু জলের নীচের দুনিয়া নিয়েই গল্প তাই শ্যুটিংও করা হবে জলের তলাতেই।

এই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে ‘ভটভটি’র শ্যুটিং। 

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *