চেহারাগত সাদৃশ্য ছাড়া জটায়ু আর একেন সম্পূর্ণ আলাদা: অনির্বাণ
RBN Web Desk: প্রায় এক বছর অপেক্ষার পর ২২ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা ফেরত’-এর ট্রেলার। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার গল্প ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ এবং ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’ অবলম্বনে সৃজিত পরিচালনা করেছেন তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ়। ফেলুদা, তোপসে ও জটায়ুর ভূমিকায় থাকছেন টোটা রায়চৌধুরী, কল্পন মিত্র ও অনির্বাণ চক্রবর্তী। এর আগে একেনবাবু সিরিজ়ের নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অনির্বাণ।
তবে ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দর্শকদের একাংশের মত, অনির্বাণ এখনও একেনবাবু চরিত্রটি থেকে বেরোতে পারেননি। জটায়ুর জন্য তাঁর ম্যানারিজ়মগুলো যেন অনেকটাই একেনবাবু ঘেঁষা। অনির্বাণ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “এটা সম্পূর্ণভাবেই দর্শকদের ব্যাপার। একটা দুই-আড়াই মিনিটের ট্রেলার দেখে পুরো ছবিটা সম্পর্কে বিচার করা একেবারেই ঠিক নয়। প্রথম যখন একেনবাবু চরিত্রের জন্য আমার লুক দর্শকদের সামনে আসে তখন তাঁরা বলেছিলেন, এ তো হুবহু জটায়ু। কারণ বইয়ের পাতায় একেনবাবুর চেহারার যা বর্ণনা আছে তার সঙ্গে আমার লুকে জটায়ুর চেহারাগত মিল বেশি ছিল। তাই জটায়ু হিসেবে আমার এই লুকটা দর্শক কিছুটা হলেও দেখে অভ্যস্ত। তাই হয়তো একেনবাবুর মধ্যে যেমন জটায়ুকে খুঁজে পেতেন, ঠিক তেমনই জটায়ুর মধ্যে একেনকে খুঁজে পাচ্ছেন।”
আরও পড়ুন: যন্তর মন্তর কক্ষের নেপথ্যে
তবে জটায়ু আর একেনবাবু কোথাও গিয়ে মিলে যাচ্ছে এমনটা মনে করেন না অনির্বাণ। “শুধুমাত্র চেহারাগত সাদৃশ্য ছাড়া বাকি সবক্ষেত্রেই দুজনে একদম আলাদা দুটি চরিত্র। জটায়ু একজন অত্যন্ত নিপাট, সহজ সরল ভালোমানুষ যার ভিতর আর বাইরেটা এক। অন্যদিকে একেনবাবু বাইরে থেকে নিজেকে সরল প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করলেও ভিতর সে অত্যন্ত সেয়ানা এবং চালাক প্রকৃতির। দর্শক আগে ছবিটা দেখুক, তারপর বিচার করবেন আমি জটায়ু চরিত্রটার প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হয়েছি কিনা,” জানালেন অনির্বাণ।
২০১১ সালে বিভু ভট্টাচার্য মারা যাওয়ার পর সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় জটায়ুবিহীন দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ়ও। তবে জটায়ু ছাড়া ফেলুদার ছবি যে অনেকটাই পানশে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকদিন ধরেই নতুন জটায়ুর খোঁজ চলছিল। সন্তোষ দত্ত, মোহন আগাসে, রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, বিভু ভট্টাচার্যর পর যোগ হলো অনির্বাণের নাম।
“একটা অনুষ্ঠানে সৃজিত আমাকে দেখামাত্রই বলে ওঠেন, আরে এই তো আমার জটায়ু। সৃজিত যদি কোনওদিন বড়পর্দায় ফেলুদা পরিচালনা করেন তাহলে আমাকেই উনি জটায়ু করবেন, এটা আন্দাজ করেছিলাম। তাই আমি জানতাম যে ফেলুদা নিয়ে ছবি হলে জটায়ু চরিত্রে কাজ করার একটা সুযোগ পেলেও পেতে পারি। দেখো, সন্তোষ দত্ত যে মাত্রায় জটায়ুকে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা ছোঁয়ার ক্ষমতার আমার আছে কি নেই, সেই দিকে যাচ্ছি না। ওনাকে অনুকরণ করার কোনও চেষ্টা আমি করিনি, সেটা সম্ভবও নয়। আমি নিজের মতো করেছি। কোনও কাজের জন্যই আমি খুব একটা হোমওয়ার্ক করি না। এক্ষেত্রে আমি গল্পগুলোকে বারবার ভালো করে পড়েছি, সেইভাবেই নিজের ম্যানারিজ়ম দিয়ে চরিত্রটাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি,” বললেন অনির্বাণ।
তবে ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’-এর থেকে ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’র ট্রেলারটি দর্শকের বেশি পছন্দ হয়েছে বলে মনে করছেন অনির্বাণ। “গল্পের কারণে ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’-এর ট্রেলারটা একটু ধীরগতির মনে হতে পারে,” বললেন অনির্বাণ। “অন্যদিকে ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’ মগনলাল মেঘরাজের উপস্থিতি এবং অন্যান্য অ্যাকশন দৃশ্য বেশি থাকার কারণে দর্শকের বেশি ভালো লাগছে। তবে আমি আবারও বলছি আগে সিরিজ়টি মুক্তি পাক, সবাই দেখুক তারপর দর্শক বিবেচনা করবেন।”
বড়দিনে আড্ডাটাইমসে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ফেলুদা ফেরত’।